বরানগরে সোনার দোকানে নৃশংস খুনে ‘মোটা মাথা’ গ্রেফতার! ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সাফল্য পুলিশের, লুটের নেপথ্যে কি পরিচিত কেউ?

বরানগরের শম্ভুনাথ দাস লেনে স্বর্ণ ব্যবসায়ী শঙ্কর জানা খুনের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ওঠা সমালোচনার মধ্যেই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রথম সাফল্য পেল বরানগর থানা। সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে খুনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দু’জনকে কলকাতা থেকে পাকড়াও করেছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে একজন এই নৃশংস ডাকাতি ও খুনের ঘটনার মূল ষড়যন্ত্রকারী বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে এই খুনের ঘটনার দু’দিন পর সোমবার ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের তীব্র বিক্ষোভের মুখে পড়েন এলাকার তৃণমূল বিধায়ক তথা অভিনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।
লুটের নেপথ্যে পরিচিতের হাত?
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত ব্যবসায়ী শঙ্কর জানার দোকান থেকে প্রায় ১৫ কেজি সোনা লুট হয়েছে, যার বাজারমূল্য আনুমানিক ১৭ কোটি টাকা। যদিও দোকানে আরও কয়েক কেজি সোনা ও প্রায় ২ লক্ষ টাকা নগদ ছিল, তাতে হাত দেয়নি দুষ্কৃতীরা। লুটের সামগ্রী ও ধৃত দু’জনের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ছ’কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক পদস্থ কর্তা।
তদন্তকারীদের মনে প্রশ্ন, দুষ্কৃতীরা দোকানের যাবতীয় তথ্য— কখন, কোন সময়ে হানা দিতে হবে এবং কখন বেরিয়ে যেতে হবে— এই সমস্ত ‘টিপস’ পেল কীভাবে?
আততায়ীদের বয়স: সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশের অনুমান, আততায়ীদের প্রত্যেকেরই বয়স ১৭ থেকে ২২ বছরের মধ্যে।
পরিচিত যোগ: ব্যবসায়ী শঙ্কর জানা দোকানে কারও জুতো পরে ঢোকা পছন্দ করতেন না। আততায়ীরাও ক্রেতা সেজে দোকানের বাইরে জুতো খুলেই ভেতরে ঢুকেছিল। এছাড়া ব্যবসায়ীর ছেলে না থাকা এবং বিকেল তিনটে নাগাদ ওই রাস্তার সিংহভাগ দোকান বন্ধ থাকার মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও দুষ্কৃতীরা জোগাড় করেছিল।
এই সমস্ত তথ্যই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে পরিচিত কারও হাত থাকার সম্ভাবনা জোরালো। পুলিশ ধৃতদের জেরা করে এই স্থানীয় যোগসূত্র এবং বাকি দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে।
বিক্ষোভের মুখে সায়ন্তিকা: ‘সুরক্ষা নিশ্চিত করব’
খুনের দু’দিন পর বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে গেলে খুনিদের কঠোর শাস্তির দাবিতে তাঁর সামনেই স্লোগান দেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। কেন বারবার তাঁদের উপর হামলা হচ্ছে, সেই প্রশ্নও শুনতে হয় বিধায়ককে।
বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দোপাধ্যায় বলেন, “ঘটনাটি নৃশংস। আমি ঘটনার পর না-আসলেও প্রতিনিয়ত যোগাযোগ ছিল দলের স্থানীয় কাউন্সিলরদের সঙ্গে। পুলিশ কমিশনারের সঙ্গেও আমার আলাদাভাবে কথা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমি নিজে পুলিশ কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা যাতে সুনিশ্চিত করা যায়, সেটা দেখব। আগামী দিনে এই ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে, তার জন্য আরও সিসিটিভি লাগাতে হবে। পুলিশ আউটপোস্টের বিষয়ে নিশ্চয় আমি কমিশনারকে বলব।”
পুলিশ তদন্তের স্বার্থে ধৃত দু’জনের পরিচয় সামনে আনতে চায়নি। তারা শুধুমাত্র লুটের উদ্দেশ্যেই এই কাজ করেছিল, নাকি এর নেপথ্যে অন্য কোনো গভীর রহস্য রয়েছে— তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।