“বাসের ভাড়া ৫ গুণ বেশি, ট্রেনের টিকিট নেই”-উত্তরবঙ্গে বিপর্যয়ে, বিপাকে মানুষ

বাঙালির সবচেয়ে পছন্দের পুজোর ছুটিতে এবার ভয়ঙ্কর রূপ দেখাল উত্তরবঙ্গ। প্রবল বৃষ্টি ও ভয়াবহ ধসের কারণে দার্জিলিং এবং সিকিমের বিস্তীর্ণ এলাকা এখন কার্যত বিপর্যস্ত। শান্ত পাহাড়ের এই অশান্ত রূপের মাঝখান থেকে চরম দুর্দশা নিয়ে কোনোমতে বেঁচে ফিরেছেন অসংখ্য পর্যটক। এক বাঙালি পর্যটকের বর্ণনায় উঠে এসেছে সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা এবং শিলিগুড়িতে সুযোগসন্ধানী পরিবহন ব্যবসায়ীদের চূড়ান্ত ‘ফায়দা লোটার’ ছবি।
জানা গিয়েছে, গত ৩ অক্টোবর উত্তরবঙ্গের চটকপুর গ্রামে পৌঁছনোর পর থেকেই শুরু হয় ঝিরঝিরে বৃষ্টি। পরদিন গন্তব্য ছিল সোনাদার একটি ফরেস্ট কটেজ। সকাল থেকে শুরু হয় মুষলধারে বর্ষণ। চটকপুর থেকে সোনাদা নামার ট্রেকিং-এর পরিকল্পনা মাঝপথেই স্থগিত রেখে কোনোমতে একটি গাড়িতে সোনাদা পৌঁছনো সম্ভব হয়।
কিন্তু রাত বাড়তেই শুরু হয় প্রকৃতির ভয়ঙ্কর তাণ্ডব। সেই পর্যটকের কথায়, “পাহাড়ের এমন ভয়ঙ্কর রূপ আমি আগে কখনও দেখিনি।” টানা বর্ষণের ফলে গোটা এলাকা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
পরদিন বিকেল পাঁচটায় শিলিগুড়ি থেকে কলকাতার বাস ধরার কথা ছিল। কিন্তু রাস্তা বন্ধের খবর পেয়ে বেলা ১১টা নাগাদই চেকআউট করতে হয়। শুরু হয় মূল যুদ্ধ। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বহু গাড়িকে অনুরোধ করা সত্ত্বেও কেউ শিলিগুড়ি পৌঁছে দিতে রাজি হয়নি। শেষমেশ একটি পারিবারিক গাড়ি তাদের আশ্বস্ত করে।
কিন্তু সেই গাড়িও বেশি দূর এগোতে পারেনি। ভয়াবহ ধ্বস এবং ধ্বংসস্তূপের মাঝে সব গাড়ি আটকে যায়। জীবন হাতে নিয়ে কোনোমতে রাত ৯.৩০টা নাগাদ শিলিগুড়ি পৌঁছনো সম্ভব হয়।
স্বাভাবিকভাবেই নির্ধারিত বাস ততক্ষণে গন্তব্যের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছে। শিলিগুড়ি পৌঁছে শুরু হয় আর এক যুদ্ধ – টিকে থাকার যুদ্ধ।
পর্যটকের অভিযোগ, পরিস্থিতি বুঝে বাসের মালিকেরা তখন ফায়দা লোটার অপেক্ষায়। সাধারণ ১০০০ টাকার বাসের টিকিটমূল্য তখন পৌঁছেছে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায়! শুধু বাস নয়, বিমানের ভাড়াও সাধারণ মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। অবশেষে সরকারি স্পেশাল বাসের সাহায্য নিয়ে নিরাপদে কলকাতায় ফিরতে সক্ষম হন তারা।
এই পরিস্থিতিতে উত্তরবঙ্গে আটকে থাকা পর্যটকদের দ্রুত ও সুস্থভাবে ঘরে ফেরার জন্য প্রার্থনা জানিয়েছেন এই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হওয়া পর্যটকেরা।