নাগরাকাটার দুর্গত এলাকায় মমতা, বিজেপিকে ‘মিথ্যে প্রচার’ না করার হুঁশিয়ারি, মৃতদের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ

উত্তরবঙ্গের বন্যা কবলিত এলাকা নাগরাকাটায় পৌঁছে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার সকালে দুর্গত এলাকা ঘুরে তিনি প্রশাসনকে দ্রুত উদ্ধার কার্যক্রম এবং পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেন। তবে এই দুর্যোগের মধ্যেও কেন্দ্রের ত্রাণ কার্যক্রমে রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে বিজেপি যে প্রশ্ন তুলেছে, তার কড়া জবাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
“এনডিআরএফ কেন্দ্রের দান নয়”: বিজেপিকে হুঁশিয়ারি
গতকাল বাগডোগরা বিমানবন্দরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য অভিযোগ করেছিলেন, রাজ্য সরকার উদ্ধারকাজে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, যা কিছু কাজ হচ্ছে তা কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে। নাগরাকাটায় পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রী সেই অভিযোগ সরাসরি উড়িয়ে দেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এনডিআরএফ শুধু কেন্দ্রের নয়, আমাদের সঙ্গেও ওদের চুক্তি আছে। এটি কোনো কেন্দ্রের দান নয়, রাজ্যও এনডিআরএফকে অর্থ প্রদান করে। অথচ মিথ্যে প্রচার চলছে।” তিনি নাম না করে বিজেপিকে সতর্ক করে বলেন, “দুর্যোগের সময় বিভ্রান্তি ছড়ানো উচিত নয়। মানবিকতার খাতিরে রাজনীতি না করার অনুরোধ করছি।” তিনি নিশ্চিত করেন যে, রাজ্য সরকারও এনডিআরএফের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ চালাচ্ছে।
মৃতদের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ও চাকরি
ত্রাণ শিবিরে দাঁড়িয়ে মৃতদের পরিবারের পাশে সমবেদনা জানান মুখ্যমন্ত্রী। দুর্গতদের জন্য তিনি বড় ঘোষণা করেছেন:
ক্ষতিপূরণ: বন্যায় নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
চাকরি: মৃতদের পরিবারের একজনকে বিশেষ হোমগার্ডের চাকরি দেওয়া হবে।
বাসস্থান: যাদের বাড়িঘর ভেঙেছে, তাদেরও আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
হাই টাইডের আশঙ্কা: “প্রাণের চেয়ে বড় কিছু নেই”
বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই বন্যা মূলত ভুটান থেকে অতিরিক্ত জল ছাড়া এবং অতি ভারী বৃষ্টির কারণে হয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, আকাশ পরিষ্কার হলেও বিপদ এখনও কমেনি। আগামী দু’দিনে হাই টাইডের আশঙ্কা রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “নতুন করে কোনো প্রাণ যেন না ঝরে। প্রাণের চেয়ে বড় কিছু নেই। বেঁচে থাকলে ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণ সম্ভব, কিন্তু প্রাণ গেলে তা আর ফেরানো যায় না।” নদী সংলগ্ন বিপজ্জনক এলাকায় যারা বাস করছেন, তাদের দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে স্থানান্তর করতে তিনি প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। ত্রাণ শিবিরে কার্যক্রম তদারকি করে স্থানীয়দের ত্রাণ, খাবার ও চিকিৎসা নিশ্চিত করেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামীকাল তিনি মিরি এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন।