দশমীর পর মন খারাপ নয়, হলদিয়ায় এখন থিমের ‘লক্ষ্মী যুদ্ধ’! ৬৯ বছরের প্রাচীন পুজোয় বাজেট ৬ লক্ষ, টেক্কা দিচ্ছে কে কাকে?

বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা শেষ হলেও উৎসবের আমেজ এখনও শেষ হয়নি পূর্ব মেদিনীপুরের শিল্পনগরী হলদিয়ার উপকণ্ঠে। এখানকার তিনটি গ্রাম— চাউলখোলা, কিসমত শিবরাম নগর এবং শোভারামপুর-এর মানুষের কাছে দুর্গাপূজা নয়, বরং কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোই হল বছরের সেরা উৎসব। দশমীর বিষাদের পরিবর্তে এই তিন গ্রামে এখন চলছে লক্ষ্মীপুজোকে কেন্দ্র করে উৎসবের রেশ।
বছরের পর বছর ধরে এই ঐতিহ্য চলে আসছে। কৃষিপ্রধান এই গ্রামগুলিতে লক্ষ্মীপুজো শ্রেষ্ঠ উৎসব হওয়ার পিছনে রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য। বিশ্বকর্মা পুজো থেকেই শুরু হয়ে যায় প্রস্তুতি। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলে এই উৎসব, যেখানে গোটা জেলার হাজার হাজার দর্শনার্থী ভিড় জমান।
থিমের জোয়ারে কে কাকে টেক্কা দেবে?
হলদিয়ার এই তিন গ্রামে বড় লক্ষ্মীপুজোর সংখ্যা প্রায় ১৫ থেকে ২০টি। ভক্তি আর আরাধনার পাশাপাশি এখানে চলে থিমের রেষারেষি। মণ্ডপ সজ্জা থেকে প্রতিমা নির্মাণ— সর্বত্রই থাকে নতুনত্বের ছোঁয়া। এলাকার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পুজোর ঝলক:
চাউলখোলা অগ্রণী সংঘ (৬৯তম বর্ষ)
থিম: ‘লক্ষ্মী এলো বাংলার ঘরে’।
মণ্ডপ: ধনসম্পদের গোলার আদলে প্রায় ৪০ ফুট উচ্চতার মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। যার বাজেট প্রায় ৬ লক্ষ টাকা।
বিশেষ উদ্যোগ: ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক অচিন্ত্য মান্না ও হরিপদ কর জানিয়েছেন, গ্রাম বাংলার মহিলাদের হাতের তৈরি বিভিন্ন কারুকার্যে প্রতিমা সাজানো হচ্ছে। পাশাপাশি, শিল্প শহরে দূষণ রোধে চারা গাছ বিতরণ করা হবে।
উদ্বোধক: জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক।
কিসমত শিবরাম নগর সমন্বয় ক্লাব (৬৯তম বর্ষ)
থিম: ‘প্রকৃতি’।
সজ্জা: গাছ, পাখি, ফুল-ফলের শোভায় সেজে উঠবে গোটা মণ্ডপ।
স্থানীয়দের দাবি: স্থানীয় বাসিন্দা ও স্কুল শিক্ষক অনুপ কুমার পাঁজা নিশ্চিত করেন, হলদিয়ার এই গ্রামগুলির কাছে লক্ষ্মীপুজোই বড় উৎসব এবং প্রতিবছর সেই উপলক্ষে গ্রাম সেজে ওঠে।
কিসমত শিবরামনগর ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র স্মৃতি সংঘ (৪৯তম বর্ষ)
থিম: ‘মোবাইল নয়, বই থাকুক’।
বিশেষ উদ্যোগ: পুজো কমিটির সম্পাদক ভাস্বৎ সুন্দর বেরা জানান, পুজোয় খরচ বাঁচিয়ে তাঁরা থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুকে আর্থিক সাহায্য করবেন। পাশাপাশি, বিভিন্ন মানুষকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।
উদ্বোধক: জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি।
কিসমত শিবরামনগর বিনয়ী সংঘ (৬৯তম বর্ষ)
থিম: ‘আমি সেই মেয়ে’।
বাজেট: চলতি বছর এই পুজোর বাজেট ৫ লক্ষ টাকা।
গোটা এলাকা জুড়ে লক্ষ্মীপুজোকে কেন্দ্র করে উৎসবের আবহ তৈরি হলেও, প্রকৃতির বাধায় কোথাও কোথাও কিছুটা উদ্বেগের ছায়া রয়েছে।