সুপ্রিম কোর্টের শুনানির আগেই বিহারে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা, এসআইআর বিতর্ক জিইয়েই শুরু নির্বাচনী প্রক্রিয়া

বিশেষ ভোটার তালিকা সংশোধন (Special Intensive Revision বা SIR) প্রক্রিয়া বৈধ না অবৈধ, সেই মামলার শুনানি সুপ্রিম কোর্টে রয়েছে মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর)। তার ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগেই বিহার বিধানসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করল জাতীয় নির্বাচন কমিশন (EC)। বিরোধীদের আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণ করে সোমবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, বিহারে দু’দফায় ভোট হবে— প্রথম দফা ৬ নভেম্বর এবং দ্বিতীয় দফা ১১ নভেম্বর। ভোটগণনা ও ফল ঘোষণা হবে ১৪ নভেম্বর।
একবার নির্বাচন কমিশন ভোটের দিন ঘোষণা করে দিলে সুপ্রিম কোর্ট সচরাচর তাতে হস্তক্ষেপ করে না। ফলে কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির আশঙ্কা, এসআইআর বৈধ কি না, তা সর্বোচ্চ আদালত বিচার করার আগেই এসআইআর-এর তৈরি ভোটার তালিকা অনুযায়ীই ভোট হয়ে যাবে এবং সুপ্রিম কোর্ট অন্তত বিহারের ক্ষেত্রে আর হস্তক্ষেপ করবে না।
বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে এসআইআর: কেন তড়িঘড়ি ভোটের ঘোষণা?
বিহারের এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে দেশজুড়ে রাজনৈতিক বিতর্ক তুঙ্গে। বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, এই প্রক্রিয়ায় বিপুল পরিমাণ দরিদ্র, প্রান্তিক ও সংখ্যালঘু ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নাগরিকত্ব প্রমাণে আধার, ভোটার কার্ড ও রেশন কার্ড গ্রাহ্য করা হয়নি বলেও অভিযোগ ওঠে।
এই পরিস্থিতিতেই সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি সূর্য কান্ত ও জয়মাল্য বাগচী। শুনানির সময়ে আদালত আগেই জানিয়েছিল, “নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক সংস্থা হিসেবে আইন মেনে কাজ করছে, এই অনুমানেই আমরা এগোচ্ছি। তবে যদি কোনও বেআইনি কাজ প্রমাণিত হয়, তবে পুরো প্রক্রিয়াই বাতিল করা হবে।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার অবশ্য এই বিতর্ক উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী প্রতিটি ভোটের আগে বিশেষ ভোটার তালিকা সংশোধনের আইনি অধিকার কমিশনের আছে। যাঁদের নাম নিয়ে আপত্তি ছিল, তাঁদের সময় দেওয়া হয়েছিল ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সেরকম উল্লেখযোগ্য আপত্তি আসেনি।” তিনি আরও জানান, বিহারের এসআইআর প্রক্রিয়ায় প্রতিটি নাগরিকের পরিচয় যাচাই আইনসম্মতভাবে হয়েছে, এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী এখন আধার কার্ডকেও বৈধ পরিচয়পত্র হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
বুথে নতুন প্রযুক্তি ও নিয়ম: মোবাইল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা
জ্ঞানেশ কুমার জানান, ভোটারদের সুবিধার্থে বুথগুলিতে একাধিক প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এবার গোটা বিহারে প্রায় ৯০ হাজার ভোটগ্রহণ কেন্দ্র থাকবে। লম্বা লাইন এড়াতে প্রতিটি বুথে সর্বোচ্চ ১২০০ ভোটার রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এছাড়াও, কমিশন এক নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে: ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের আগে মোবাইল ফোন বাইরে রাখতে হবে। পরীক্ষামূলকভাবে এই নিয়ম সফল হওয়ায়, এবার গোটা বিহারে এটি কার্যকর করা হবে। ভোটার পরিচয় যাচাইয়ে ইলেকট্রনিক রেজিস্টার ও ডিজিটাল ভোটার কার্ড যাচাই ব্যবস্থা চালু করার কথাও জানান মুখ্য নির্বাচন কমিশনার।
নির্বাচন কমিশনের এই তড়িঘড়ি ভোটের দিন ঘোষণা রাজনৈতিকভাবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, সুপ্রিম কোর্টে এসআইআর-এর বৈধতা নিয়ে রায়ের অপেক্ষা থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল।