ডিভিসি-র জল ছাড়ায় ভাসছে ঘাটাল-চন্দ্রকোনা, নিম্নাঞ্চলে জল ঢুকে বিচ্ছিন্ন বহু গ্রাম, চাষের জমি ডুবে চরম দুর্ভোগ

প্রবল বৃষ্টি এবং জলাধারগুলি থেকে দফায় দফায় জল ছাড়ার ফলে ফের একবার বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল ও চন্দ্রকোনা মহকুমা। শনিবার রাতভর টানা বৃষ্টির পর রবিবার সকাল থেকেই শিলাবতী ও কংসাবতীর মতো নদীগুলির জলস্তর দ্রুত বেড়ে গিয়েছে। নবান্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, একাধিক জলাধার থেকে জল ছাড়ার ফলেই এই নদীগুলির জল উপচে পড়ে নিম্নাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা এখন জলমগ্ন।

জলবন্দি ঘাটাল-চন্দ্রকোনার বিস্তীর্ণ এলাকা
ঘাটালের নিমপাতা, আনন্দপুর, ভাঙ্গাদহ, পান্না সহ একাধিক এলাকা ইতিমধ্যেই প্লাবিত হয়েছে। চন্দ্রকোনার যাদবপুর এবং ক্ষীরপাই সংলগ্ন এলাকাতেও নদীর জল ঢুকে পড়েছে। বহু গ্রাম কার্যত বাইরের জগতের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন। রাস্তায় হাঁটুজল, ডুবে গিয়েছে কয়েক’শো বিঘা কৃষিজমি।

প্রশাসনিক তৎপরতা: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই এই এলাকাগুলিতে প্রয়োজনীয় ত্রাণ এবং প্রশাসনিক সব ধরনের সাহায্য করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। সেচমন্ত্রী মানস ভূঁইয়া-সহ একাধিক আধিকারিককে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দুর্ভোগ চরমে: ঘাটাল–চন্দ্রকোনা জুড়ে রাস্তাঘাট জলমগ্ন থাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। বন্যার ফলে চাষের ব্যাপক ক্ষতি হবে বলেও আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

উত্তরবঙ্গের জন্য চরম সতর্কতা
এদিকে, উত্তর বিহারে তৈরি হওয়া নিম্নচাপটি বর্তমানে ঘূর্ণাবর্তে পরিণত হলেও, তার প্রভাবে সমগ্র পূর্বভারতে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হতে পারে।

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের আধিকারিক অন্বেষা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং, কালিম্পং, কোচবিহার ও জলপাইগুড়িতে ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পাহাড়ী অঞ্চলে ধসের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। মেঘালয়, সিকিম এবং অসমেও প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় নদীগুলির জলস্তর আরও বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।

দক্ষিণবঙ্গেও বৃষ্টি চলবে
কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি সোমবার পর্যন্ত চলবে। উপকূলবর্তী দুই জেলা—দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টির তীব্রতা কিছুটা কমলেও, স্থানীয়ভাবে বজ্রঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকবে।

প্রবল বৃষ্টি ও ধসের কারণে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সড়ক ও রেল যোগাযোগ ইতিমধ্যেই ব্যাহত। প্রশাসন সতর্ক অবস্থায় থাকলেও, মানুষের একটাই প্রশ্ন— আর কতদিন এই জলবন্দি জীবন কাটাতে হবে?