মহাকাশে কোন দেশের স্যাটেলাইটের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি? জেনেনিন পরিসংখ্যান

বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ছিল স্পুটনিক। ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর সোভিয়েত ইউনিয়নের উৎক্ষেপণ করা স্পুটনিক ছিল পৃথিবীর কক্ষপথে আবর্তিত হওয়া মানুষের তৈরি প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ। সেই সময় পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথ ছিল অনেকটাই খালি।
প্রায় সাত দশক পর, সেই স্পুটনিক স্যাটেলাইট এখন মহাকাশের ৪৫ হাজার মনুষ্যসৃষ্ট বস্তুর ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছে। যদিও এই ৪৫ হাজার বস্তুর মধ্যে প্রায় ৩২,৭৫০টিই মহাকাশ আবর্জনা (Space Junk) হিসেবে বিবেচিত, তবুও বর্তমানে পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা সক্রিয় স্যাটেলাইটের সংখ্যাও বিপুল।
কার কত স্যাটেলাইট?
জাতিসংঘের আউটার স্পেস অ্যাফেয়ার্স অফিসের তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর কক্ষপথে মোট ১৩,৭২৭টি স্যাটেলাইট রয়েছে, যা ৮২টি বিভিন্ন রাষ্ট্র বা সংস্থার মালিকানাধীন। স্যাটেলাইট সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, তাদের রয়েছে ৯,২০৩টি স্যাটেলাইট, যা দ্বিতীয় স্থানে থাকা রাশিয়ার (১,৪৭৫টি) ছয় গুণেরও বেশি। এছাড়া চীনের ১,১২২টি এবং যুক্তরাজ্যের ৭২২টি স্যাটেলাইট রয়েছে।
স্যাটেলাইটের ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। ২০২৪ সালে কেবল এক বছরেই রেকর্ডসংখ্যক ২,৬৯৫টি নতুন স্যাটেলাইট পৃথিবীর কক্ষপথে যোগ হয়েছে।
সামরিক স্যাটেলাইটে কারা এগিয়ে?
সামরিক স্যাটেলাইটের সংখ্যার দিক থেকেও (২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী) যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষে রয়েছে। তাদের মোট ২৪৭টি সামরিক স্যাটেলাইট কক্ষপথে রয়েছে। এরপরেই রয়েছে চীন (১৫৭টি), রাশিয়া (১১০টি) এবং ফ্রান্স (১৭টি)। ইসরায়েল, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও লুক্সেমবার্গের মতো দেশগুলোরও কক্ষপথে সামরিক স্যাটেলাইট রয়েছে।
স্যাটেলাইটের কাজ কী?
স্যাটেলাইটের ব্যবহার আমাদের জীবনযাত্রার ধরন আমূল বদলে দিয়েছে। ‘স্যাটন্যাভ’ জিপিএস থেকে শুরু করে বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট পর্যন্ত, আধুনিক বিশ্ব বিভিন্ন কারণে স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভরশীল। আবহাওয়ার পূর্বাভাস, টেলিভিশন সিগনাল বা স্টারলিংকের মতো পরিচিত পরিষেবাগুলি ছাড়াও স্যাটেলাইট আরও বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে:
আর্থিক লেনদেন: ক্রেডিট কার্ডে পিৎজা অর্ডার করার মতো আর্থিক লেনদেনও কখনো কখনো স্যাটেলাইট লিংকের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
গুরুত্বপূর্ণ নজরদারি: বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার নজরদারি, মহাসাগরের স্রোতের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, এবং হাবলের মতো মহাকাশভিত্তিক টেলিস্কোপ পরিচালনা।
সামরিক ব্যবহার: যোগাযোগ ব্যবস্থা, আগাম সতর্কতা প্রদান, রিয়েল-টাইম নজরদারি এবং সামরিক জিপিএস।
স্পুটনিকের সেই বিখ্যাত ‘বিপ-বিপ’ শব্দের মধ্য দিয়েই শুরু হয়েছিল এক নতুন যুগ। আজ, হাজার হাজার স্যাটেলাইট আমাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করছে, দিক নির্দেশনা দিচ্ছে ও পর্যবেক্ষণ করছে—এই পুরো প্রযুক্তি বদলে দিয়েছে আমাদের সমাজকে। প্রতিদিন মহাকাশে যোগ হচ্ছে প্রায় সাত টন নতুন যন্ত্রপাতি, এবং এই প্রতিযোগিতা থামার কোনো লক্ষণ নেই, বরং প্রতিনিয়ত এটি আরও গতিশীল হয়ে উঠছে।