সাহস কত! রাজ্যের রাস্তাতেই অনুমতি ছাড়া বিশাল তোরণ, বিশ্বভারতীর সেই কাজ বন্ধে নামল পূর্ত দফতর!

ফের রাজ্য সরকারের পূর্ত (PWD) দফতরের সঙ্গে সংঘাত বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের। রাজ্যের রাস্তা অর্থাৎ পূর্ত বিভাগের জায়গায় কোনও রকম আনুষ্ঠানিক অনুমতি না-নিয়েই তোরণ নির্মাণ শুরু করার অভিযোগ উঠল কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতীর বিরুদ্ধে। খবর পেয়েই পূর্ত দফতরের আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। এরপরেই বোলপুর মহকুমাশাসক (SDO) ও এসডিপিও-সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছে পূর্ত বিভাগ।

শনিবার শান্তিনিকেতন রোডে রতনকুঠি গেস্ট হাউস সংলগ্ন রাস্তার দুই ধারে তোরণের জন্য মাটি খুঁড়ে রড ও সিমেন্টের ঢালাইয়ের কাজ শুরু করেছিল বিশ্বভারতী। কিন্তু এই রাস্তাটি সম্পূর্ণভাবে রাজ্য সরকারের পূর্ত দফতরের অধীনে।

কেন কাজ বন্ধ করল পূর্ত দফতর?
বোলপুর পূর্ত বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার রাজকুমার বাঁঠিয়া আধিকারিকদের নিয়ে নির্মীয়মাণ স্থানে যান এবং বিশ্বভারতীর ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে অনুমতিপত্র দেখতে চান।

অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার রাজকুমার বাঁঠিয়া জানান, “আমাদের জায়গায় নির্মাণ হচ্ছিল। আমরা গিয়ে বিশ্বভারতীর ইঞ্জিনিয়ারের কাছে অনুমতি আছে কিনা দেখতে চাই। কিন্তু তারা কোনও অনুমতিপত্র দেখাতে পারেনি। আমাদের কাছে কোনও অনুমতি চাওয়াও হয়নি। এরপর তারাই নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। এই সমগ্র বিষয়টি নিয়ে এসডিও, এসডিপিও ও আমাদের বিভাগের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের কাছে যা যা জানানোর জানিয়েছি।”

পূর্ত দফতরের অভিযোগ, রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কোনও রকম অনুমতি না-নিয়েই নির্মাণ কাজ শুরু করার এই ঘটনা আইন লঙ্ঘন।

কেন তোরণ বানাচ্ছে বিশ্বভারতী?
গত বছর ২০২৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতীকে ইউনেসকো ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ স্বীকৃতি দেয়। বিশ্বের একমাত্র চলমান বিশ্ববিদ্যালয় এই তকমা পাওয়ার পরই উপাচার্য প্রবীরকুমার ঘোষ সিদ্ধান্ত নেন— বিশ্বভারতীর চারদিকে প্রবেশ পথে শিল্পী সুরেন্দ্রনাথ করের স্থাপত্যশৈলী ধরে রেখে চারটি বড় তোরণ নির্মাণ করা হবে।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বোলপুর দমকল বিভাগের সামনের রাস্তা, শান্তিনিকেতন রোডে দুটি (কবিগুরু হস্তশিল্প মার্কেট ও শ্যামবাটি বাজার সংলগ্ন) এবং কালিসায়র মন্দির সংলগ্ন প্রবেশ পথে আরও একটি তোরণ নির্মাণের কথা রয়েছে। সেই লক্ষ্যেই কাজ শুরু করেছিল কর্তৃপক্ষ।

তবে, এর আগেও কবিগুরু হস্তশিল্প মার্কেটের কাছে তোরণ নির্মাণের জন্য মাটি খোঁড়া শুরু করলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ করে সেই কাজ বন্ধ করে দেন। এছাড়াও, উপাচার্য প্রবীরকুমার ঘোষ পূর্বপল্লীর তিনটি খেলার মাঠ ট্রাক্টর দিয়ে চষে দিয়েছেন, তা নিয়েও এলাকায় তীব্র ক্ষোভ রয়েছে।

অনুমতি ছাড়া নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়ায় ফের একবার রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের মধ্যে সংঘাত নতুন মাত্রা পেল। বিশ্বভারতীর তরফে এ বিষয়ে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, কারণ বিশ্ববিদ্যালয় এখন ছুটি চলছে।