মুসলিম ব্যক্তিগত আইন ও POCSO আইনের সংঘাত, নাবালিকা বিয়ে নিয়ে বড় মন্তব্য দিল্লি হাইকোর্টের!

মুসলিম ব্যক্তিগত আইন ও POCSO আইনের সংঘাত, নাবালিকা বিয়ে নিয়ে বড় মন্তব্য দিল্লি হাইকোর্টের!

দিল্লি হাইকোর্ট সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানিতে ভারতের জন্য একটি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি (Uniform Civil Code – UCC) প্রণয়নের পক্ষে সওয়াল করেছে। আদালত বলেছে যে, ব্যক্তিগত বা ঐতিহ্যবাহী আইন যেন দেশের সাধারণ আইনকে ছাড়িয়ে না যায়। বিচারপতি অরুণ মোঙ্গা একটি মামলার শুনানিতে এই পর্যবেক্ষণ করেন।

মামলাটি ছিল হামিদ রাজা নামের ২৫ বছর বয়সী এক যুবকের জামিন সংক্রান্ত। তার বিরুদ্ধে এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছিল। আদালত দেখেছে, ইসলামি আইন অনুযায়ী সাবালিকা হওয়া নাবালিকা মেয়েরা আইনত বিয়ে করতে পারে। কিন্তু ভারতীয় ফৌজদারি আইন, যেমন ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (BNS) এবং পকসো (POCSO) আইন অনুযায়ী, নাবালিকাকে বিয়ে করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।

বিচারপতি মোঙ্গা প্রশ্ন তোলেন, যখন কোনও সম্প্রদায় দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত আইন মেনে চলে, তখন কি তাদের এভাবে অপরাধী বানানো উচিত? এই প্রসঙ্গে আদালত জানতে চায়, “এটা কি ইউনিফর্ম সিভিল কোডের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সঠিক সময় নয়, যেখানে ব্যক্তিগত বা ঐতিহ্যবাহী আইন দেশের আইনকে অগ্রাহ্য করতে পারবে না?”

আদালত আরও জানায়, এই ধরনের সংঘাতের কারণে আইন প্রণয়নকারী সংস্থার একটি স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। তাদের ঠিক করতে হবে যে তারা কি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করতে থাকবে, নাকি আইনি নিশ্চয়তার মাধ্যমে সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি বাড়াবে।

আদালত বলেছে যে, যদিও UCC-এর বিরোধীরা যুক্তি দেন যে, এর ফলে প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার অর্থাৎ ধর্মীয় স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হতে পারে, তবে এমন স্বাধীনতা কোনোভাবেই এমন প্রথার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যাবে না যা ব্যক্তিকে ফৌজদারি অপরাধের মুখে ঠেলে দেয়।

আদালত একটি মধ্যপন্থা প্রস্তাব করে বলে, বাল্যবিবাহের মতো গুরুতর বিষয়গুলিতে কঠোর আইন প্রয়োগ করে শাস্তি নিশ্চিত করা উচিত, কারণ এটি সরাসরি BNS এবং পকসো আইনের পরিপন্থী। একই সাথে, কম সংবেদনশীল ব্যক্তিগত বিষয়গুলিকে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ধীরে ধীরে বিবর্তিত হতে দেওয়া যেতে পারে। তবে এই ধরনের সমস্যার স্থায়ী সমাধান আইনসভার উপরই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

হামিদ রাজার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারা (ধর্ষণ) এবং পকসো আইনে অভিযোগ আনা হয়েছিল। মেয়েটি তার সৎবাবার দ্বারা যৌন হেনস্তার শিকার হয়েছিল এবং তার একটি সন্তানও ছিল। মেয়েটির সৎবাবাই হামিদ রাজার বিরুদ্ধে FIR দায়ের করেছিল।

আদালতের নথিপত্রে নাবালিকা হিসেবে উল্লেখ থাকলেও, মেয়েটি নিজেই নিজেকে প্রাপ্তবয়স্ক (প্রায় ২০ বছর) বলে দাবি করে এবং বলে যে সে হামিদকে ইসলামি আইন অনুযায়ী স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছে। তাদের একটি সন্তানও আছে। মেয়েটি হামিদ রাজার জামিনের পক্ষেও সওয়াল করে।

মামলার শুনানি শেষে আদালত দেখতে পায়, মুসলিম ব্যক্তিগত আইন এবং দেশের দণ্ডবিধির মধ্যে একটি সুস্পষ্ট সংঘাত রয়েছে। আদালত হামিদ রাজাকে নিয়মিত জামিন দিয়েছে, কারণ তার বিরুদ্ধে মামলাটি মূলত মেয়েটির সৎবাবার দ্বারা নিজের অপরাধ ঢাকার জন্য দায়ের করা হয়েছিল।