বর্জ্য প্লাস্টিক এবার ইটে রূপান্তরিত, পরিবেশ বাঁচানোর পাশাপাশি কর্মসংস্থানের নতুন দিশা বাংলায়

প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার এক নতুন এবং যুগান্তকারী উদ্যোগ নিয়ে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সম্প্রতি পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের আয়োজিত একটি রাজ্যস্তরের কর্মশালায় প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করে তৈরি ইট ও পেভার ব্লক-এর ব্যবহার নিয়ে আলোচনা হয়। পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার এই উদ্যোগের প্রশংসা করে জানিয়েছেন, সিভিল কনস্ট্রাকশনে এই ধরনের পণ্য ব্যবহার করা যায় কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে।
প্লাস্টিকের ইটে মুগ্ধ মন্ত্রী
কর্মশালার পাশাপাশি আয়োজিত প্রদর্শনীতে প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে তৈরি নানা সামগ্রী দেখানো হয়। সেখানে ময়নাগুড়ির একটি স্টলে প্লাস্টিকের তৈরি ইট ও পেভার ব্লক দেখে বিশেষভাবে মুগ্ধ হন মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। তিনি জানান, “এটি একটি অসাধারণ উদ্ভাবন। এই ইট সম্পূর্ণ প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি এবং এর দাম প্রায় ভালো মানের সাধারণ ইটের সমান।” তিনি আরও বলেন যে, নদীর বাঁধ বা স্যাঁতসেঁতে জায়গার নির্মাণকাজে এই ইট প্রচলিত ইটের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকরী হতে পারে, কারণ এতে জলীয় অনুপ্রবেশের সমস্যা নেই এবং এর স্থায়িত্বও বেশি।
প্রয়োগ ও বাণিজ্যিকীকরণের চ্যালেঞ্জ
এই উদ্যোগের সম্ভাবনা দেখে মন্ত্রী দফতরের আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে এই প্লাস্টিক ইটের ব্যবহারিক দিকগুলো নিয়ে গবেষণা করার জন্য। তবে তিনি শুধু উদ্ভাবনেই থেমে থাকতে চান না। প্রদীপ মজুমদার বলেন, “এই ধরনের পণ্য যদি বাজারে টিকে থাকতে না পারে, তাহলে এর দীর্ঘমেয়াদি কোনো প্রভাব পড়বে না। তাই গ্রাহকদের মধ্যে চাহিদা তৈরি করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।”
রাজ্য সরকার এই ধরনের উদ্ভাবনী উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছে এবং প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় যারা ভালো কাজ করেছে, এমন ছয়টি উদ্যোগকে পুরস্কৃতও করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রের প্রকল্পই ছিল।
পরিবেশ ও কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্লাস্টিক দিয়ে ইট তৈরির এই উদ্যোগ যদি সফল হয়, তবে এটি পরিবেশ দূষণ কমানোর পাশাপাশি নির্মাণ শিল্পে একটি নতুন বিকল্পের সৃষ্টি করবে। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হয়, যা পরিবেশের জন্য বড় হুমকি। এই বর্জ্য ব্যবহার করে যদি শিল্প গড়ে তোলা যায়, তাহলে একদিকে যেমন পরিবেশ রক্ষা হবে, অন্যদিকে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হবে।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এই প্লাস্টিক ইটের মান এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এর ভারবহন ক্ষমতা এবং দীর্ঘস্থায়ীত্ব বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করা প্রয়োজন। সব মিলিয়ে, এই কর্মশালা প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে সম্পদ তৈরির উদ্যোগে এক নতুন আশা জাগিয়েছে। এই প্রকল্প কতটা সফল হয়, তা সময়ই বলে দেবে।