আফগানিস্তানের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ বাগরাম বিমান ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ ফের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য সরাসরি হুমকি দিলেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ এক পোস্টে ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়েছেন, যদি আফগানিস্তান এই ঘাঁটি আমেরিকাকে ফিরিয়ে না দেয়, তাহলে এর পরিণতি হবে ‘ভয়াবহ’।

ট্রাম্পের এই মন্তব্যে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘আমরা এখন আফগানিস্তানের সঙ্গে কথা বলছি। আমরা দ্রুত বাগরাম বিমান ঘাঁটি আমাদের নিয়ন্ত্রণে চাই। যদি তারা তা না করে, তাহলে তারা জানতে পারবে আমি কী করতে যাচ্ছি।’ ট্রাম্পের দাবি, চিনকে নজরে রাখার জন্য কাবুলের কাছে অবস্থিত এই প্রধান বিমান ঘাঁটি পুনরুদ্ধার করা আমেরিকার জন্য জরুরি। এর আগে তিনি রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, বাগরাম বিমান ঘাঁটি চিনের পরমাণু অস্ত্র তৈরির স্থান থেকে মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত।

তালিবানের কড়া প্রতিক্রিয়া: ‘অসম্ভব’
ট্রাম্পের এই হুঁশিয়ারি উড়িয়ে দিয়েছে আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালিবান সরকার। তালিবান সরকারের পক্ষ থেকে সাফ জানানো হয়েছে, আফগানিস্তানের মাটি থেকে কোনো মার্কিন সামরিক কার্যকলাপ অনুমোদন করা হবে না। তাই বাগরাম বিমান ঘাঁটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তরের কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

তালিবান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক পরিচালক জাকির জালালি নিজের এক্স হ্যান্ডেলে (পূর্বতন টুইটার) জানিয়েছেন, আফগানিস্তান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও অভিন্ন স্বার্থের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। কিন্তু মার্কিন সামরিক উপস্থিতির কোনো সম্ভাবনা নেই।

কেন গুরুত্বপূর্ণ বাগরাম বিমান ঘাঁটি?
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর শুরু হওয়া ২০ বছরের যুদ্ধের সময় বাগরাম ছিল আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাবাহিনীর সবচেয়ে বড় ঘাঁটি। এই ঘাঁটিতে একসময় বার্গার কিং এবং পিৎজা হাটের মতো জনপ্রিয় ফাস্ট-ফুড রেস্তরাঁও ছিল, যা মার্কিন সেনাদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। পাশাপাশি, এখানে একটি বিশাল জেল কমপ্লেক্সও ছিল। প্রায় দুই দশক ধরে এটি ন্যাটো বাহিনীর প্রধান ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময় অন্যান্য এলাকার মতো এই ঘাঁটিটিও তালিবানদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বর্তমানে বাগরাম ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি মনে করেন, এই ধরনের একটি পদক্ষেপ অত্যন্ত কঠিন এবং ব্যয়বহুল হবে।

ট্রাম্পের এই দাবি যদি সত্যি হয় এবং কোনো চুক্তি হয়, তবে তা তালিবানদের জন্য একটি বড় পরিবর্তন হতে পারে, যারা মার্কিন সেনাদের বিতাড়িত করে ক্ষমতায় এসেছিল।