‘ভেতরের অসুরকে বধ করতে চাই’, পুজোর আগে ভারোত্তোলনে কেন মজেছেন আসানসোলের এই নারীরা

আর মাত্র কয়েকটা দিন, তারপরই শুরু হবে দুর্গাপূজা। দেবীপক্ষের আগমনী সুরের আগেই আসানসোলে একদল নারীর খোঁজ পাওয়া গেছে, যারা নিজেদের জীবনের সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এক ভিন্ন শক্তির আরাধনায় মেতে উঠেছেন। তাদের কেউ শিক্ষিকা, কেউ বা সরকারি কর্মী, কেউ আবার গৃহবধূ বা বিউটিশিয়ান। সংসারের সব দায়িত্ব সামলে প্রতিদিন সন্ধ্যায় তারা নিজেদেরকে নিয়োজিত করেন পাওয়ার লিফটিং-এর মতো কঠিন এক খেলায়। আর এই অধ্যবসায়েই এসেছে সাফল্য।

জীবনের বাধা পেরিয়ে ভারোত্তোলন
জেলা, রাজ্য এবং জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় ভারোত্তোলনে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক জিতে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন এই নারীরা। তাদের এই কঠোর পরিশ্রমের পেছনে কী কারণ? শিক্ষিকা জয়িতা সরকার বলেন, “অলসতা মানুষের ভেতরের একটি অসুর। এই অসুরকে বধ করতে এবং নতুন কিছু করার জন্য আমরা নিজেদের শক্তিকে বাড়াচ্ছি। দেবী দুর্গা যেভাবে অসুরকে বধ করেছিলেন, আমরাও একইভাবে নিজেদের ভেতরের শক্তিকে বৃদ্ধি করছি।” সম্প্রতি তিনি জেলা স্তরে চারটি সোনার পদক জিতেছেন।

অন্ডাল গার্লস স্কুলের শিক্ষিকা পারমিতা রায় চট্টোপাধ্যায় জানান, তিনি ফিট থাকার জন্য এই খেলা শুরু করেছিলেন। ৪৫ বছর বয়সে এসেও তিনি ভারোত্তোলন করছেন এবং সফলও হচ্ছেন। অন্যদিকে, মেকআপ আর্টিস্ট অমৃতা মজুমদার কোমর এবং হাঁটুর ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে শুরু করেছিলেন। আত্মীয়-স্বজনের কটাক্ষ উপেক্ষা করে তিনি এখন প্রতিযোগিতায় রৌপ্য পদক জিতেছেন এবং ভেতর থেকে এক নতুন আত্মবিশ্বাস খুঁজে পেয়েছেন।

আন্তর্জাতিক পদকজয়ী কোচের মন্তব্য
এই মহিলাদের প্রশিক্ষক, আন্তর্জাতিক পদকজয়ী কুন্তল দাস তাদের নিষ্ঠা দেখে মুগ্ধ। তিনি বলেন, “ছাত্রী থেকে শুরু করে মধ্যবয়সী – সবার মধ্যেই প্রবল উৎসাহ দেখতে পাচ্ছি। নিজেদের পেশার দায়িত্ব সামলে এসে এখানে পরিশ্রম করা, প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা এবং পুরুষদের পাশাপাশি সমানভাবে জায়গা করে নেওয়া, সত্যিই অভাবনীয়।”

কুন্তল দাস নিজেও সম্প্রতি এশিয়া প্যাসিফিক পাওয়ার লিফটিং প্রতিযোগিতায় দুটি সোনার পদক জিতেছেন। তিনি মনে করেন, আসানসোলের এই নারীরা সমাজের জন্য এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। তাদের সাফল্য প্রমাণ করে যে, সঠিক চেষ্টা ও পরিশ্রম থাকলে যেকোনো বয়সের নারীই তার পছন্দের ক্ষেত্রে সফল হতে পারেন।