মাল্টিটাস্কিং মানেই কি সফলতার চাবিকাঠি? এই ভুল ধারণা আপনাকে ধ্বংস করছে না তো?

যদি একবারে অনেক কিছু করার চেষ্টা করেন, তবে আপনি কোনও কাজেই ভালোভাবে মনোযোগ দিতে পারবেন না। একাধিক প্রজেক্ট একসাথে শুরু করলে পরিশ্রম বেশি হলেও ফল খারাপ হবে। এর ফলে কাজে আগ্রহ ও আত্মবিশ্বাস কমে যাবে। কিন্তু এর একটি সহজ সমাধান রয়েছে: এক সময়ে শুধুমাত্র একটি কাজেই মনযোগ দেওয়া।

লিওনার্দো দা ভিঞ্চির ভুল ধারণা

আমরা প্রায়ই লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মতো ‘ইউনিভার্সাল জিনিয়াসদের’ উদাহরণ টেনে একসাথে অনেক কিছু করার চেষ্টা করি। কিন্তু আসল সত্যটি হলো, তাঁরা কখনোই একসাথে অনেক কাজ করেননি। বরং একটার পর একটা বিষয় নিয়ে গবেষণা ও অনুশীলন করেছেন। কারণ, মানুষের মস্তিষ্ক একসাথে অনেক কাজ করার জন্য তৈরি নয়।

মাল্টিটাস্কিংয়ের কুফল শুধু কাজ করার ক্ষেত্রেই নয়, এক সময়ে কয়েকটি বিষয় নিয়ে চিন্তা করলেও মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। চলুন জেনে নিই পূর্ণ মনোযোগী হওয়ার কৌশল হিসেবে এক সময়ে একটি বিষয়ে ফোকাস করার প্রধান কয়েকটি কারণ:

মাল্টিটাস্কিংয়ের ৬টি ভয়াবহ কুফল

 

  • স্মৃতিশক্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব: যখন আপনি একটি কাজ থেকে অন্যটিতে মনোযোগ সরান, তখন আপনার মস্তিষ্ক আগের কাজটির কিছু তথ্য অপ্রয়োজনীয় মনে করে ফেলে দেয়। ফলে আগের কাজে ফিরে গেলে মনেই করতে পারেন না আপনি কী করছিলেন। যেমন, কথা বলার সময় টপিক বদলে ফেললে মূল প্রসঙ্গে ফিরতে গিয়ে মনে হয়, “কী যেন বলছিলাম?”
  • মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে যাওয়া: মনে করুন, আপনার উদ্দেশ্য ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়া। কিন্তু মাঝপথে বন্ধুর অনুরোধে চট্টগ্রামে নেমে কিছু ডেলিভারি দিতে গেলেন। এতে আপনার সময় ও শক্তি দুটোই নষ্ট হলো, আর মূল উদ্দেশ্য পূরণে দেরি হলো। একইভাবে, কাজের ক্ষেত্রেও অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো আমাদের মূল লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
  • মানসিক চাপ বৃদ্ধি: এক সময়ে চারটি কাজ নিয়ে চিন্তা করলে একটি নিয়ে ব্যস্ত থাকার সময়েও বাকি তিনটির চিন্তা আপনাকে মানসিক চাপ দেবে। এতে সবগুলো কাজের মান নষ্ট হবে। তাই প্রতিটি কাজ করার সময়ে শুধু সেই কাজটিরই চাপ নিন।
  • মেজাজ খিটখিটে হওয়া: মন বিক্ষিপ্ত থাকলে মেজাজ খিটখিটে হবেই। যখন আপনার মনোযোগ বারবার একটি থেকে অন্য কাজে সরবে, তখন কোনো কাজই ঠিকমতো হবে না। এর ফলে মেজাজ খারাপ হওয়া স্বাভাবিক। এই অভ্যাস বাদ দিলে অন্যদের প্রতি আপনার আচরণও অনেক সুন্দর হয়ে উঠবে।
  • সমাধানের ক্ষমতা কমে যাওয়া: একসাথে অনেক কাজ করতে গেলে আপনার চিন্তাগুলো অগোছালো হয়ে পড়ে। ফলে কোনো সমস্যার কার্যকর সমাধান বের করা কঠিন হয়। যখন একটি কাজ নিয়ে গভীর মনোযোগ দেবেন, তখন সমস্যাগুলো স্পষ্ট হবে এবং সমাধান দ্রুত খুঁজে পাওয়া যাবে।
  • ক্লান্তি ও দুর্বলতা: বারবার ফোকাস বদলালে মস্তিষ্ক দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ফলে যেখানে আপনি আট ঘণ্টা পূর্ণ এনার্জিতে কাজ করতে পারতেন, সেখানে ছয় ঘণ্টাই কঠিন হয়ে যায়। এর বদলে একে একে কাজ করলে দেখবেন অনেক চটজলদি কাজ করতে পারছেন এবং সহজে ক্লান্ত হচ্ছেন না।

পরিশেষে

মনোবিজ্ঞানী ও পারফর্মেন্স কোচরা এখন জোরেশোরে মাল্টিটাস্কিংয়ের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। মাল্টিটাস্কিং করার সময়ে মনে হয় অনেক কাজ হচ্ছে, কিন্তু ফলাফল হয় অনেক খারাপ। এর চেয়ে যদি রুটিন করে মনোযোগী হওয়ার কৌশল অবলম্বন করে একে একে কাজগুলো শেষ করা যায়, তবে অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। যদি আপনি একজন মাল্টিটাস্কার হয়ে থাকেন, তবে এখনই অভ্যাসটি বদলে ফেলার সময়।