“জমির দাম দিতে পারেনি রেল!”-ক্ষতিপূরণ হিসেবে রেলের থেকেই ট্রেন পেলেন কৃষক, তারপর কী হলো?

এক কৃষক তার জমির ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতে মামলা করেছিলেন। রায়ে তিনি জিতেছিলেন। কিন্তু ক্ষতিপূরণ হিসেবে তিনি যা পেয়েছিলেন, তা হয়তো স্বপ্নেও ভাবেননি। ক্ষতিপূরণ হিসেবে একটি ট্রেন পেয়েছিলেন সেই কৃষক! ভারতের নর্দার্ন রেলের বিরুদ্ধে মামলায় জিতে এই অদ্ভুত রায় পান তিনি।

ঘটনার সূত্রপাত
ঘটনাটি ২০১৭ সালের। পাঞ্জাবের লুধিয়ানার কাটানা গ্রামের বাসিন্দা কৃষক সম্পূর্ণ সিংহ। ২০০৭ সালে নর্দার্ন রেল লুধিয়ানা-চণ্ডীগড় রেলপথের জন্য তাঁর জমি অধিগ্রহণ করেছিল। কথা ছিল একর প্রতি ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। সেই হিসাবে সম্পূর্ণ সিংহের ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁকে মাত্র ৪২ লাখ টাকা দেওয়া হয়। বাকি টাকা না পেয়ে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হন।

আদালতের ঐতিহাসিক রায়
২০১৫ সালে আদালত নর্দার্ন রেলওয়েকে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা বকেয়া ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু সেই নির্দেশ মানা হয়নি। এরপর ২০১৭ সালে অতিরিক্ত দায়রা বিচারক যশোবল বর্মা এক নজিরবিহীন রায় দেন। তিনি নির্দেশ দেন, লুধিয়ানা স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা স্বর্ণ শতাব্দী এক্সপ্রেস ট্রেনটি (১২০৩০) এবং স্টেশন মাস্টারের ঘর কৃষক সম্পূর্ণ সিংহকে দিয়ে দিতে হবে।

পাঁচ মিনিটের জন্য ট্রেনের মালিক!
আদালতের নির্দেশের পর সম্পূর্ণ সিংহ তাঁর আইনজীবী রাকেশ গান্ধীকে নিয়ে লুধিয়ানা স্টেশনে পৌঁছান। সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে ট্রেনটি স্টেশনে পৌঁছালে তাঁরা চালকের হাতে আদালতের নির্দেশ তুলে দেন। লেখা ছিল, তিনিই এখন ওই ট্রেনের মালিক। এই পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগে মাত্র ৫ মিনিট। অর্থাৎ, পাঁচ মিনিটের জন্য ট্রেনের মালিক হয়েছিলেন ওই কৃষক। তবে তিনি জানান, যাত্রীদের ভোগান্তির কথা ভেবে তিনি ট্রেনটি আটকাতে চাননি।

পরে আদালতের এক কর্মকর্তার উপস্থিতিতে রেলের একজন সেকশন ইঞ্জিনিয়ার ওই ট্রেনটি আদালত কর্তৃক তত্ত্বাবধানে রাখার জন্য কৃষকের থেকে ফিরিয়ে নেন। রেলের তৎকালীন ডিভিশনাল ম্যানেজার অনুজ প্রকাশ কটাক্ষ করে বলেন, “৩০০ মিটার দীর্ঘ একটা ট্রেন নিয়ে একজন কৃষক কী করবেন? তিনি কি সেই ট্রেন বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন?” তবে এই ঘটনার পর রেল শেষ পর্যন্ত কৃষকের ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দিতে বাধ্য হয়।