টাইটানিকের অভিশাপ? ধ্বংসাবশেষের চারপাশে লুকিয়ে আছে ভয়ঙ্কর বিপদ, যা শুনলে আঁতকে উঠবেন!

১৯১২ সালে প্রথম সমুদ্রযাত্রাতেই হিমশৈলের ধাক্কায় ডুবে গিয়েছিল আরএমএস টাইটানিক। সেই সময়ের সবচেয়ে বড় এই জাহাজটিতে প্রায় দেড় হাজারের বেশি যাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ এখন নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূল থেকে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার ফুট (৩.৮ কিলোমিটার) গভীরে পড়ে আছে। সম্প্রতি সাবমেরিনে করে সেই ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে পাঁচ ব্যক্তি নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় আবার সামনে এসেছে সমুদ্রের গভীরে লুকিয়ে থাকা বিপদগুলো। বিবিসি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, টাইটানিকের চারপাশে যে যে বিপদ লুকিয়ে রয়েছে, তা শুনলে অবাক হতে হয়।
সমুদ্রের গভীরে কী কী বিপদ লুকিয়ে আছে?
১. চরম অন্ধকার ও নেভিগেশন
গভীর সমুদ্রে সম্পূর্ণ অন্ধকার থাকে, কারণ সূর্যের আলো এক হাজার মিটারের বেশি গভীরে পৌঁছাতে পারে না। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ এমন একটি অঞ্চলে রয়েছে, যাকে বলা হয় ‘মিডনাইট জোন’। এখানে পৌঁছানোর জন্য সম্পূর্ণ অন্ধকারের মধ্য দিয়ে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সাবমেরিন চালাতে হয়। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের বিশদ মানচিত্র থাকা সত্ত্বেও পাইলটদের পথ খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হয়। কারণ এই গভীরতায় পথ ভুল করার আশঙ্কা অনেক বেশি।
২. প্রবল চাপ
সমুদ্রের যত গভীরে যাওয়া যায়, জলের চাপ তত বাড়তে থাকে। ১২ হাজার ৫০০ ফুট গভীরে জলের চাপ প্রায় ৪০ মেগাপ্যাসকেল (এমপিএ), যা ভূপৃষ্ঠের তুলনায় ৩৯০ গুণ বেশি। স্টকহোম ইউনিভার্সিটির গবেষক রবার্ট ব্লাসিয়াকের মতে, সেখানে জলের চাপ একটি গাড়ির টায়ারের চাপের চেয়েও প্রায় ২০০ গুণ বেশি। তাই এই গভীরে যেতে গেলে এমন সাবমেরিন দরকার, যার দেহকাঠামো অত্যন্ত পুরু ও মজবুত।
৩. গভীর সমুদ্রের স্রোত
সমুদ্রের উপরিভাগের মতো শক্তিশালী না হলেও গভীর সমুদ্রেও স্রোত থাকে। মাঝে মাঝে এখানে ‘বেন্থিক ঝড়’ নামক বিরল ঘটনা দেখা যায়, যা তলদেশে থাকা বস্তুকে তার জায়গা থেকে সরিয়ে দেওয়ার মতো শক্তি রাখে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের স্রোত সাধারণত সাবমেরিনের জন্য হুমকি তৈরি করার মতো শক্তিশালী নয়।
৪. ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে ধ্বংসাবশেষ
সমুদ্রের তলদেশে ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে থাকার ফলে টাইটানিক ধীরে ধীরে ক্ষয় হচ্ছে। লোহা নষ্ট করা ব্যাকটেরিয়ার কারণে এই প্রক্রিয়া আরও দ্রুত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জাহাজের অবশিষ্ট অংশগুলো প্রতি বছরই একটু একটু করে ধসে পড়ছে। তাই যেকোনো ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা এড়াতে এর থেকে একটি নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা উচিত।
৫. পলির প্রবাহ
অতীতে সমুদ্রের তলদেশে হঠাৎ পলির প্রবাহ দেখা গেছে, যা মানবসৃষ্ট বস্তুকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। যদিও নিখোঁজ সাবমেরিনের ক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনার কোনো ইঙ্গিত নেই, তবু গবেষকরা বলছেন, টাইটানিকের চারপাশে সুদূর অতীতে বড় ধরনের ভূমিধসের চিহ্ন পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা এই অঞ্চলকে ‘ইন্সট্যাবিলিটি করিডর’ বলে অভিহিত করেছেন।
নিখোঁজ সাবমেরিনের অনুসন্ধান অব্যাহত থাকলেও, এই ধরনের চ্যালেঞ্জিং এবং অপ্রত্যাশিত পরিবেশে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শনের ঝুঁকিগুলো আজও ১৯১২ সালের মতোই প্রাসঙ্গিক।