“হুবহু যেন সব মিলে যাচ্ছে? “-নেপাল বিক্ষোভ যেন বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি

গণআন্দোলনের মুখে সরকারের টালমাটাল অবস্থা। একের পর এক মন্ত্রীর পদত্যাগ, সরকারি বাসভবনে ভাঙচুর— সব মিলিয়ে বেগতিক বুঝে সম্ভবত দেশ ছেড়ে পালাতে চাইছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি। সরকারিভাবে বলা হচ্ছে চিকিৎসার জন্য দুবাই যাচ্ছেন তিনি। তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, এটি গত বছরের বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি। সেখানেও ছাত্র-যুবকদের নেতৃত্বে তীব্র আন্দোলন দানা বেঁধেছিল।

নেপালে এই আন্দোলনের সূত্রপাত সরকারের আকস্মিক সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞায়। ২৬টি প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে রাস্তায় নামে সেদেশের যুবসমাজ। এর সঙ্গে যুক্ত হয় দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা দুর্নীতি ও স্বৈরাচারী মনোভাবের ক্ষোভ। এই আন্দোলনকে বলা হচ্ছে ‘জেন-জি বিপ্লব’, কারণ সোশ্যাল মিডিয়া-সচেতন তরুণ প্রজন্মই এই আন্দোলনের নেতৃত্বে রয়েছে। বাংলাদেশেও কর্মসংস্থান ও রাজনৈতিক দমননীতির বিরুদ্ধে জমে থাকা ক্ষোভ থেকেই আন্দোলনের জন্ম হয়েছিল, যার মূল চালিকাশক্তি ছিল ছাত্র-যুবকরাই।

নেপালে সরকারের প্রতিক্রিয়া ছিল বেশ কঠোর। প্রধানমন্ত্রী অলি প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ‘জেন-জি’র কাছে তিনি মাথা নোয়াবেন না। গুলি চালিয়ে আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করা হয়, যার ফলে এখনও পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যু ঘটেছে। মঙ্গলবার সকালেও ২ আন্দোলনকারী প্রাণ হারিয়েছেন। তবে প্রবল চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়ার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে সরকার। বাংলাদেশেও গত বছরের আন্দোলনে পুলিশি দমননীতি প্রবলভাবে চোখে পড়েছিল। বহু জায়গায় গুলি, কাঁদানে গ্যাস এবং গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছিল।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই দুই দেশের আন্দোলনের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। উভয় ক্ষেত্রেই প্রতিবাদ দানা বেঁধেছে সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ থেকে, যার নেতৃত্ব দিচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। নেপালে এখনও পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলির সরাসরি প্রভাব নেই, যা বাংলাদেশের আন্দোলনের প্রথম দিকেও দেখা গিয়েছিল। কিন্তু যেভাবে মন্ত্রীদের পদত্যাগ এবং প্রধানমন্ত্রীর দেশ ছাড়ার গুঞ্জন শুরু হয়েছে, তাতে অনেকেই মনে করছেন, নেপাল কি বাংলাদেশের পথেই হাঁটছে?