২০৩৫-এর টার্গেট, ২০০-র বেশি যুদ্ধজাহাজ নিয়ে ‘ব্লু-ওয়াটার নেভি’ গড়বে ভারত

২০৩৫ সালের মধ্যে একটি শক্তিশালী ‘ব্লু-ওয়াটার নেভি’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বড় পদক্ষেপ নিয়েছে ভারতীয় নৌসেনা। এই সময়ের মধ্যে মোট ২০০টিরও বেশি যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ভারত মহাসাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান আধিপত্যের মোকাবিলা করা এবং দেশের সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই প্রধান উদ্দেশ্য।

বর্তমানে নৌবাহিনীর বহর:

বর্তমানে ভারতীয় নৌবাহিনীর হাতে প্রায় ১৪০টি যুদ্ধজাহাজ, ১৭টি ডিজেল-ইলেক্ট্রিক সাবমেরিন এবং দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত আছে আড়াই শতাধিক বিমান ও হেলিকপ্টার। তবে, এর মধ্যে অনেক পুরনো জাহাজ ও সাবমেরিন রয়েছে, যেগুলো বাদ দিলে নতুন সংযোজনের মাধ্যমে বহর ২০০ থেকে ২৩০-এ পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নির্মাণাধীন ও অনুমোদিত প্রকল্প:

ইতিমধ্যেই দেশের শিপইয়ার্ডগুলোতে ৫৫টি যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিনের নির্মাণ কাজ চলছে।

আরও ৭৪টি নতুন জাহাজ তৈরির জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অনুমোদন পাওয়া গেছে, যদিও সেগুলোর চুক্তি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

নতুন প্রকল্পের তালিকা:

নৌবাহিনীর হাতে থাকা কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে:

৯টি ডিজেল-ইলেক্ট্রিক সাবমেরিন (প্রজেক্ট ৭৫-আই)।

৭টি আধুনিক মাল্টি-রোল স্টেলথ ফ্রিগেট।

৮টি অ্যান্টি-সাবমেরিন করভেট।

১২টি মাইন কাউন্টারমেজার ভেসেল।

এছাড়াও, ভবিষ্যতে আরও চারটি ডেস্ট্রয়ার যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান:

যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ শুধু সামরিক শক্তিই বাড়ায় না, এটি দেশের অর্থনীতিতেও বড় ভূমিকা রাখে। একটি জাহাজ নির্মাণ প্রকল্পে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে বহু শিল্পে কর্মসংস্থান তৈরি হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, একটি জাহাজ নির্মাণে প্রায় ১.৮ গুণ অর্থনৈতিক প্রভাব পড়ে, অর্থাৎ একটি প্রকল্প থেকে পাঁচটি নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়।

চীনের মোকাবিলায় প্রস্তুতি:

ভারত মহাসাগরে চীনের সামরিক উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তারা ভারত মহাসাগরের বিভিন্ন দেশে নিজেদের ঘাঁটি তৈরি করছে এবং পাকিস্তানকে আধুনিক সাবমেরিন সরবরাহ করছে। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের নৌবহরকে শক্তিশালী করা ভারতের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাতারাতি একটি নৌবহর তৈরি করা সম্ভব নয়, এর জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং নিরবচ্ছিন্ন বিনিয়োগ প্রয়োজন। ২০৩৫ সালের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ভারত সেই পথেই ধাপে ধাপে এগিয়ে চলেছে।