“নদীর ধারে বাস, ভাবনা বারো মাস’!”-মিলছে না জল, নদী খুঁড়ে জল তুলছেন মানুষ

কথায় আছে, ‘নদীর ধারে বাস, ভাবনা বারো মাস।’ এই প্রবাদটি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন কংসাবতী নদীর তীরের পুরুলিয়া জেলার পুস্তমডি টোলা-সহ পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দারা। একদিকে যেমন রয়েছে শুষ্ক জলবায়ু, অন্যদিকে রয়েছে পানীয় জলের তীব্র সংকট। ফলে বাধ্য হয়েই নদীর চরে বালি খুঁড়ে চুয়া (খাল) তৈরি করে চুঁইয়ে আসা জল পান করছেন গ্রামের মানুষ।

জঙ্গলমহলের আড়শা ব্লকের বেলডি গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে থাকা পুস্তমডি টোলায় প্রায় চার বছর আগে বাড়ি বাড়ি পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত দু’মাস ধরে সেই সংযোগ পুরোপুরি বন্ধ। ফলে গ্রামের মহিলা ও শিশুরা বাধ্য হয়ে হাঁড়ি-কলসি নিয়ে নদীর দিকে ছুটছেন জলের খোঁজে। কেবল পুস্তমডি নয়, এই পঞ্চায়েতের কুদাগাড়া ও কাঞ্চনপুরের পানীয় জল প্রকল্পও গত দু’মাস ধরে অচল বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

কুদাগাড়া ও কাঞ্চনপুর থেকে আশেপাশের প্রায় সাতটি গ্রামে জল সরবরাহ করা হয়। কিন্তু গত জুন মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকেই এই সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, ২০২১ সাল থেকে বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগ দেওয়া হলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। জল সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে তাদের ভরসা করতে হয় নলকূপের ওপর। তবে গ্রামে থাকা পাঁচটি নলকূপের মধ্যে দুটি খারাপ এবং তিনটি সচল হলেও দুটির জল পানযোগ্য নয়। ফলে শুধুমাত্র একটি নলকূপই ভরসা। তবে পুস্তমডি টোলার অবস্থা আরও খারাপ, যেখানে গ্রামবাসীদের একমাত্র ভরসা নদীর বালি থেকে সংগ্রহ করা জল।

পুস্তমডি টোলার এক বাসিন্দা মোহনী মাহাতো বলেন, “বাড়ির কলে দু’মাস ধরে জল নেই। আমাদের এখানে কোনো নলকূপও নেই। তাই বাধ্য হয়ে নদীর বালি খুঁড়ে জল সংগ্রহ করতে হচ্ছে।” কবে এই সমস্যার সমাধান হবে, তা কেউ জানে না।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক নরহরি মাহাতো তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আজও মানুষ চুয়া খুঁড়ে জল সংগ্রহ করছেন, এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছু হতে পারে না। আমি এই বিষয়টি বিধানসভায় তুলে ধরব।”

অন্যদিকে, বেলডি পঞ্চায়েত প্রধান গীতা রজক জানিয়েছেন, তাঁরা সমস্যার কথা ব্লক কার্যালয়ে জানিয়েছেন এবং আবারও জানাবেন। আড়শা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিশ্বরূপ মাঝি আশ্বাস দিয়েছেন, তিনি বিডিও-র সঙ্গে কথা বলবেন। তবে আড়শা বিডিও জানিয়েছেন যে, পানীয় জলের সমস্যা জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দপ্তরের আওতায় পড়ে, ব্লক প্রশাসন এই বিষয়ে সরাসরি কিছু করতে পারে না।

একের পর এক প্রশাসনিক স্তরে দায় চাপানোর খেলায়, মোহনী মাহাতোর মতো মানুষেরা এখনও বালির গভীরে জল খুঁজছেন, সামান্য তৃষ্ণা মেটাতে।