করিমগঞ্জের নাম পরিবর্তন নিয়ে উত্তেজনা, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে আহত ১৫

অসমের করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তন করে ‘শ্রীভূমি’ রাখার সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও সহিংসতায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে এই অঞ্চল। গতকাল, ৬ সেপ্টেম্বর, ‘করিমগঞ্জ জেলা নাম পরিবর্তন প্রতিরোধ সমিতি’-র ডাকে ১২ ঘণ্টার বনধ পালিত হয়, যার জেরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ
বনধ চলাকালীন, বাদারপুরের এন.সি. কলেজের কাছে বিক্ষোভকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে জাতীয় সড়ক-৬ এবং জাতীয় সড়ক-৩৭ অবরোধ করে। এতে যান চলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে বিক্ষোভকারীরা তাদের উপর পাথর নিক্ষেপ শুরু করে। এই সংঘর্ষে পাঁচ পুলিশ কর্মীসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। এমনকি সাংবাদিকদের ওপরও হামলার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং ১১০ জনকে আটক করে।
কেন এই নাম পরিবর্তন?
গত বছরের ১৯ নভেম্বর অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা করিমগঞ্জের নাম পরিবর্তন করে ‘শ্রীভূমি’ করার সিদ্ধান্ত নেয়। মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই নামটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেওয়া, যিনি এক শতাব্দী আগে এই অঞ্চলকে ‘মা লক্ষ্মীর ভূমি’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। সরকারের দাবি, এই সিদ্ধান্ত জেলার দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক পরিচয় পুনরুদ্ধারের একটি পদক্ষেপ।
বিতর্ক ও বিরোধিতা
বিক্ষোভকারীদের একাংশ এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করছেন। তাদের মতে, এই নাম পরিবর্তনটি এই অঞ্চলের মুসলিম ঐতিহ্য মুছে ফেলার একটি প্রচেষ্টা। তাদের যুক্তি, করিমগঞ্জ নামটি ১৯শ শতাব্দীর বাঙালি মুসলিম জমিদার মুহাম্মদ করিম চৌধুরীর নামে রাখা হয়েছিল এবং এই অঞ্চলের সংস্কৃতি সিলেটের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। কংগ্রেস, বামপন্থী দল এবং স্থানীয় নাগরিক সংগঠনগুলি এই প্রতিবাদকে সমর্থন জানিয়েছে। তারা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিভাজন তৈরি করছে।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা তার অবস্থানে অনড় রয়েছেন। তিনি বলেছেন, “আমি শ্রীভূমি নাম দিইনি, এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দিয়েছিলেন। তাঁর চেয়ে বড় কেউ আছে?” এই বিতর্ক ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।