বাংলার শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ‘বহিরাগত’দের ঢল, ভিন রাজ্যের পরীক্ষার্থীদের ভিড়ে ক্ষোভে ফুঁসছে রাজ্য

আজ থেকে শুরু হওয়া শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় এক অভূতপূর্ব চিত্র দেখা গেল। স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) তথ্য অনুযায়ী, মোট ৫ লক্ষ ৬৫ হাজার চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে আজ নবম-দশমের পরীক্ষায় ৩ লক্ষ ১৯ হাজার ৯১৯ জন অংশ নিচ্ছেন। কিন্তু এদের মধ্যে বড় অংশই ভিন রাজ্যের প্রার্থী, যা রাজ্যজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

কেন ভিন রাজ্যের প্রার্থীরা বাংলায়?

সূত্রের খবর, ২০১৬ সালের পরীক্ষায় হিন্দি মাধ্যমের প্রার্থীদের অনুমতি ছিল না, কিন্তু এবার প্রথমবার ভারতীয় নাগরিক হলেই আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। হিন্দি মাধ্যম স্কুলের জন্য মোট শূন্যপদ ছিল ২২৫১টি, যার জন্য ভিন রাজ্য থেকে বিপুল সংখ্যক আবেদন জমা পড়ে। উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, বিহার, ঝাড়খণ্ড সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে প্রার্থীরা এই পরীক্ষায় অংশ নিতে এসেছেন।

রাজস্থান থেকে আসা এক পরীক্ষার্থীর অকপট স্বীকারোক্তি, “ওখানে (রাজস্থানে) পরীক্ষা কঠিন, কিন্তু এখানে পদ্ধতি সোজা, তাই এসেছি।” তিনি আরও বলেন, “দুর্নীতি সব জায়গায় হয়, ওটা কোনো ব্যাপার নয়।”

ভিন রাজ্যের প্রার্থীদের হতাশা ও বাংলার প্রতি আকর্ষণ:

মনীন্দ্র চন্দ্র কলেজের বাইরে বিহার, ঝাড়খণ্ড ও উত্তর প্রদেশের বহু পরীক্ষার্থীর ভিড় দেখা যায়। উত্তর প্রদেশ থেকে আসা প্রার্থীরা জানান, সেখানে গত চার-পাঁচ বছর ধরে শিক্ষক নিয়োগের কোনো পরীক্ষা হয়নি। একজন পরীক্ষার্থী বলেন, “উত্তর প্রদেশে কোথায় চাকরি? ওখানে কাজের সুযোগ অনেক কম। বেকারত্ব তো গোটা দেশে চরমে উঠেছে। পুরোটাই জুমলা চলছে।”

আরেকজন বলেন, “ঝাড়খণ্ড হোক বা বাংলা, সর্বত্রই দুর্নীতিতে ভরা। ঝাড়খণ্ডেও সিট বিক্রির অভিযোগ উঠেছে, পেপার লিক হয়েছে।”

রাজনৈতিক চাপানউতোর:

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “গোটা ভারতের লোক বাংলায় ছুটে আসছে কারণ বাংলায় পরীক্ষাটা হয়, এবং ঠিকঠাক হয়।” তিনি বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে কর্মসংস্থান নেই বলেও কটাক্ষ করেন।

অন্যদিকে, বিজেপি মুখপাত্র দেবজিৎ সরকার এর পাল্টা জবাব দিয়ে বলেন, “বাংলার বাঙালিরা চাকরি পায়নি কারণ তাদের মেধা চুরি হয়েছে। অন্য রাজ্যে কী হলো ওসব নিয়ে ভাবার বাঙালির সময় নেই। বাঙালি ওসব নিয়ে ভাবছে না।”

যোগ্য বাঙালি প্রার্থীদের চাকরি না পাওয়া এবং ভিন রাজ্যের প্রার্থীদের এই বিপুল উপস্থিতিতে রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া আবারও বিতর্কের কেন্দ্রে চলে এসেছে।