“ওসব মারধরের ভয় করি না”-পেটের দায়ে পুজোর কাজে ভিনরাজ্যে রওনা দিচ্ছেন ঢাকিরা

ভিন রাজ্যে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের আক্রান্ত হওয়ার খবরে পূজার শুরুতে ভয়ে গুটিয়ে গিয়েছিলেন বাংলার ঢাকিরা। কিন্তু উৎসবের মরসুমে জীবিকা আর পরিবারের আর্থিক প্রয়োজনের কাছে সেই ভয় ফিকে হয়ে গেছে। পেটের তাগিদে এবং ভালো রোজগারের আশায় আবারও ভিন রাজ্যে পূজার বায়না নিয়েছেন বালুরঘাট, আলিপুরদুয়ার ও উত্তর দিনাজপুরের ঢাকিরা।
ভয়কে জয় করে জীবনের পথে
পূজা-পার্বণে ঢাক বাজিয়েই চলে বালুরঘাটের খিদিরপুরের ২৫-৩০টি পরিবারের সংসার। স্থানীয়ভাবে রোজগার কম হওয়ায় বেশি উপার্জনের আশায় প্রতি বছর ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে হয় তাদের। এ বছর শ্রমিক হেনস্থার খবরে অনেকে প্রথমে বায়না নিতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু বছরের এই কয়েক দিনের রোজগারেই ঘরের ছাদ, মেয়ের বিয়ে, এমনকি চাষের টাকাও উঠে আসে। তাই অনেক ঢাকিই এখন বলছেন, ‘যা হয় দেখা যাবে’ অথবা ‘শিল্পীর আবার জাত কী।’
বালুরঘাটের বিশ্বজিৎ নট বলেন, “এখানে পুজো কমিটি পাঁচ হাজার টাকার বেশি দিতে চায় না, অথচ বাইরে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা উপার্জন হয়ে যায়। শ্রমিক হেনস্থার কথা শোনার পর ভয় তো লাগেই, কিন্তু আমাদের কাছে আর কোনো উপায় নেই।”
পরিবারের দুশ্চিন্তা
ছেলেদের এই ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রায় রাতের ঘুম উড়েছে মা-বাবাদের। বালুরঘাটের মালতি নট বলেন, “সেখানে গিয়ে ছেলে নিরাপদে থাকবে তো?” অন্যদিকে, রায়গঞ্জের শংকর নট, যিনি ২০ বছর ধরে বিহারের পূর্ণিয়ায় ঢাক বাজাতে যান, তিনি আশ্বস্ত হয়ে বলেন, “পূজা কমিটির সঙ্গে কথা হয়েছে, ওরা বলেছে ভয়ের কিছু নেই।” মালদার প্রতাপ রবিদাসও অর্থের কথা ভেবে ঝুঁকি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আলিপুরদুয়ারের পাটকাপাড়ার প্রয়াত ঢাকি বলরাম হাজরার শিষ্যরাও এই আতঙ্কে পিছপা নন। বলরামের ভাইপো মধুসূদন হাজরা বলেন, “আমরা শিল্পী। ওসব মারধরের ভয় করি না।”