‘পরপুরুষের স্পর্শ নিষেধ’, আফগানিস্তানে ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তূপে আটকে রয়েছেন মহিলারা

সাম্প্রতিক ভয়াবহ ভূমিকম্পে যখন আফগানিস্তান জুড়ে মৃত্যুমিছিল চলছে, তখন তালিবান সরকারের কঠোর ধর্মীয় বিধিনিষেধ আরও প্রাণহানি ঘটাচ্ছে। পরপুরুষের স্পর্শ নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা আহত মহিলাদের উদ্ধার করা যাচ্ছে না। ফলে অনেকেরই মৃত্যু হচ্ছে সাহায্য না পেয়ে।

তালিবানি ফতোয়া অনুযায়ী, কোনো নারীকে কেবল তার বাবা, ভাই, স্বামী বা ছেলেই স্পর্শ করতে পারবে। এর বাইরে অন্য কোনো পুরুষ কোনো নারীকে স্পর্শ করতে পারবে না। এই অমানবিক নিয়মের ফলে উদ্ধারকারী দল ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা মহিলাদের স্পর্শ করতে ভয় পাচ্ছে। বহু ক্ষেত্রে উদ্ধারকাজ চলাকালীন মহিলাদের এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে, অথবা তাদের পোশাক ধরে টেনে বের করা হচ্ছে। এর ফলস্বরূপ, বহু আহত মহিলা সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন।

আফগানিস্তানে মহিলা উদ্ধারকর্মীর অভাব অত্যন্ত প্রকট। তালিবান সরকার মহিলাদের জন্য চিকিৎসা প্রশিক্ষণ, উদ্ধারকাজ এবং প্রশাসনিক ভূমিকা নিষিদ্ধ করেছে। এই কারণে, ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকা বহু মহিলাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেলে রাখা হচ্ছে। বিবি আয়শা নামের এক মহিলা নিউ ইয়র্ক টাইমসকে জানান, ৩৬ ঘণ্টা ধরে তিনি ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে ছিলেন। উদ্ধারকারীরা এসেও তাকে এড়িয়ে যায়।

স্বেচ্ছাসেবক তাহজিবুল্লাহ মুহাজিব জানান, পুরুষ স্বেচ্ছাসেবকরা মহিলাদের উদ্ধার করতে চাইলেও তালিবানের কঠোর শাস্তির ভয়ে তারা সাহস পাননি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অন্য গ্রামের মহিলারা এসে আহতদের উদ্ধার করলেও, চিকিৎসার জ্ঞানের অভাবে তারা যথাযথ সাহায্য দিতে পারছেন না।

৬ মাত্রার এই ভূমিকম্পে ২২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৩৬০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। যদিও তালিবান সরকার নারী-পুরুষের আলাদা মৃত্যুর সংখ্যা প্রকাশ করেনি, তবে চিকিৎসক ও জীবিতদের মতে, নারীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এখনও বহু জায়গায় ধ্বংসস্তূপের নিচে মহিলারা আটকে রয়েছেন। তালিবানের এই ধর্মীয় গোঁড়ামি একবিংশ শতাব্দীতেও মানবিকতাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।