ভোটাধিকার রক্ষায় রাহুল-তেজস্বীর নতুন আন্দোলন, গান্ধীজির ঐতিহাসিক সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি

ভারতের ভোটাধিকার রক্ষার প্রশ্নে এক অদ্ভুত ঐতিহাসিক প্রতিসাম্যের সামনে দাঁড়িয়ে আজকের দেশ। ১৮৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার নাটাল প্রদেশে মহাত্মা গান্ধী ভারতীয়দের সীমিত ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে যেমন এক ঐতিহাসিক সংগ্রাম শুরু করেছিলেন, তেমনই ২০২৫ সালে বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে বিপুল সংখ্যক মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার আশঙ্কা ঘনীভূত হয়েছে। আর এই পরিস্থিতিতেই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, রাজদ নেতা তেজস্বী যাদব ও সিপিআই(এম-এল) লিবারেশন নেতা দীপঙ্কর ভট্টাচার্য একত্রিত হয়ে নতুন এক ভোটাধিকার আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।

১৮৯৪ সালের নাটাল এবং ২০২৫ সালের বিহার: প্রতিসাম্য

১৮৯৪ সালে নাটাল অ্যাসেম্বলিতে ‘ফ্র্যাঞ্চাইজি আইন সংশোধনী বিল’ আনা হয়েছিল ভারতীয়দের সীমিত ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য। সেই সময় গান্ধীজি এই যুক্তিকে তীব্রভাবে খণ্ডন করে বলেছিলেন, ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া মানে কর্মসংস্থান, সম্মান ও অস্তিত্ব কেড়ে নেওয়া।

আজ, ২০২৫ সালে বিহারে নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) বিশেষ নিবিড় সংশোধনী (SIR) চালু করেছে। এর ফলে বহু ভোটারের নাম বাদ যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। প্রথমে ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড গ্রহণযোগ্য দলিল হিসেবে ধরা হয়নি। পরে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে আধার যুক্ত হলেও বাকি ১১টি নথি সাধারণ মানুষের নাগালে নেই। ফলে লাখ লাখ মানুষের ভোটাধিকার বিপন্ন হয়ে পড়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, এটি আসলে ভোটার দমন ও শাসক দলের পক্ষে নির্বাচনী সুবিধা আদায়ের এক প্রক্রিয়া।

রাহুল গান্ধীর আন্দোলন

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কর্ণাটকের মহাদেবপুরা কেন্দ্রে ব্যাপক ভোট চুরির অভিযোগ তুলেছিলেন রাহুল গান্ধী। এরপর থেকেই তিনি ভোটাধিকার রক্ষার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বিহারে ১৭ দিনের দীর্ঘ ভোটার অধিকারের যাত্রা শেষ হয় ১লা সেপ্টেম্বর পাটনায়। সমাবেশে রাহুল গান্ধী জোর দিয়ে বলেন—“ভোট চুরি মানে অধিকার চুরি, চাকরি চুরি, শিক্ষা চুরি, গণতন্ত্র চুরি এবং তরুণদের ভবিষ্যৎ চুরি।” তাঁর এই বক্তব্য গান্ধীজির ১৮৯৪ সালের সতর্কবাণীর সঙ্গে যেন হুবহু মিলে যায়। বিরোধীরা বিহারের SIR-কে অভিহিত করেছেন ‘ভোট বন্দি’ নামে।

গণতন্ত্রের প্রতি চ্যালেঞ্জ

বিহারে এই আন্দোলনে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিচ্ছেন। যেমন নাটালে গান্ধীজির নেতৃত্বে সমস্ত ধর্ম ও শ্রেণির ভারতীয়রা একত্রিত হয়েছিলেন, তেমনি আজ বিহারেও সমস্ত শ্রেণি ও সম্প্রদায়ের মানুষ অংশ নিচ্ছেন। আন্দোলনে বিশেষ করে যুব সমাজের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। তাঁদের বক্তব্য, ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া মানে ভবিষ্যৎ কেড়ে নেওয়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি এই প্রবণতা অক্ষুণ্ণ থাকে তবে ভারতের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য গুরুতর আঘাতের মুখে পড়বে। রাহুল গান্ধী এই পরিস্থিতিকে সরাসরি গণতন্ত্র ও সংবিধানের প্রতি চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরেছেন।