অবৈধ ৩০০ বিঘা জমি হাতাতে ‘অপহরণ’ ও ‘খুন’, মূলচক্রী সহ গ্রেফতার ৪,

এক সাফাইকর্মীর হত্যাকাণ্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল পুলিশের হাতে। জমি নিয়ে পারিবারিক বিবাদের জেরে খুন হয়েছেন বছর একান্নর ওই সাফাইকর্মী। খুনের পরিকল্পনা থেকে সুপারি কিলার নিয়োগ— সবকিছুর পেছনেই রয়েছে নিহতের এক নিকটাত্মীয়। পুলিশ এই ঘটনায় মূলচক্রী সহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
কী ঘটেছিল?
পশ্চিম বর্ধমানের কুলটির নিয়ামতপুরে গত শুক্রবার রাতে নিজের বাড়ির সামনেই খুন হন আসানসোল পুরনিগমের অস্থায়ী সাফাইকর্মী সৈয়দ জাভেদ বারিক। পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে তাঁর মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা।
নেপথ্যে পারিবারিক বিবাদ
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, জাভেদের খুনের নেপথ্যে রয়েছে প্রায় ৩৫০ বিঘা জমি নিয়ে পারিবারিক বিবাদ। পুলিশি জেরায় উঠে আসে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। জাভেদের পিসি প্রচুর সম্পত্তির মালকিন ছিলেন। এই পিসি এক শিশুকন্যাকে দত্তক নেন, যে এখন ফারহা নাজ নামে পরিচিত। পিসির মৃত্যুর পর ফারহা ওই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করেন। তবে ফারহার কাছে কোনও বৈধ নথিপত্র ছিল না। এ নিয়ে জাভেদের সঙ্গে তাঁর বিবাদ শুরু হয়। জাভেদ ওই জমিকে পারিবারিক সম্পত্তি দাবি করে ফারহার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেন।
প্রতারণা থেকে খুন
পুলিশ সূত্রে খবর, ফারহা জাভেদের সই নকল করে জাল দলিল তৈরি করে প্রায় ৩০ বিঘা জমি বিক্রি করে দেন। এই জালিয়াতি ধরা পড়ায় জাভেদ জলপাইগুড়িতে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন এবং ফারহা গ্রেপ্তার হন। জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর প্রতিশোধের নেশায় আরও মরিয়া হয়ে ওঠেন ফারহা। কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি হাতানোর জন্য জাভেদকে সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করেন তিনি।
খুনের ব্লু-প্রিন্ট
জলপাইগুড়িতে বসেই খুনের ছক কষেন ফারহা। তাঁর এই পরিকল্পনায় সহযোগিতা করেন দুই নিকটাত্মীয় ইন্তেকাব আলম ও সাজিদ আখতার সৈয়দ ওরফে ফয়জল। পরিকল্পনা অনুযায়ী ভাড়াটে খুনি নিয়োগ করে জাভেদকে খুন করানো হয়। খুনের দিন ফারহার স্বামী আসিফ খানও সুপারি কিলারদের সঙ্গে রেইকি করেন বলে অভিযোগ।
পুলিশের জালে মূলচক্রী
খুনের পরপরই পুলিশ ইন্তেকাব আলমকে গ্রেপ্তার করে। তাকে জেরা করেই মূলচক্রী ফারহার খোঁজ পায় পুলিশ। ঘটনার পর ফারহা জলপাইগুড়িতে তাঁর পরিচারিকার বাড়িতে আত্মগোপন করেন। বাংলাদেশ পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। পুলিশ ফয়জলকে গ্রেপ্তার করে তার গাড়ি থেকে ফারহার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র উদ্ধার করে। এর পরই পুলিশ ফারহাকে তাঁর পরিচারিকার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে।
বর্তমানে ফারহা ও ফয়জল পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। তবে এখনো পলাতক ফারহার স্বামী আসিফ খান ও দুই সুপারি কিলার। পুলিশ তাদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে। এই ঘটনার আরও বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য পুলিশ ধৃতদের জেরা করছে।