‘সেনা নামিয়ে সরকার ফেলার চক্রান্ত’, মমতার পুরনো অভিযোগের পুনরাবৃত্তি?

মেয়ো রোডে তৃণমূলের দলীয় অনুষ্ঠানের মঞ্চ ভেঙে ফেলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফের একবার রাজ্য সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘাতের আবহ তৈরি হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এই ঘটনাকে বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অত্যাচারের সঙ্গে তুলনা করলেও, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এর মধ্যে ২০১৬ সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে পাচ্ছেন। সেবারও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একইরকমভাবে সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে তার সরকার ফেলার চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছিলেন।
২০১৬ সালের শেষ দিকে বিদ্যাসাগর সেতুর টোল প্লাজায় সেনাবাহিনীর একটি রুটিন মহড়া নিয়ে রাজ্য রাজনীতি উত্তাল হয়ে ওঠে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক রাজ্যকে না জানিয়ে সেনা মোতায়েন করেছে। তিনি একে ‘সেনা অভ্যুত্থান’ ঘটিয়ে সরকার ফেলার চক্রান্ত বলে আখ্যা দেন এবং টানা ৩০ ঘণ্টা নবান্নে অবস্থান করেন। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, টোল প্লাজার মতো ব্যস্ত এলাকায় সেনা নামানো অযৌক্তিক। অন্যদিকে, সেনাবাহিনী বারবার জানায় এটি একটি বার্ষিক মহড়া, যা শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব রাজ্যেই হয়ে থাকে।
সেই সময় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, টোল প্লাজায় বেসরকারি গাড়ি ও ট্রাকের তথ্য সংগ্রহ তাদের রুটিন কাজ। কলকাতা পুলিশ এই চিঠি স্বীকার করলেও মহড়ায় আপত্তি জানায়। এরপরও রাজনৈতিক বিতর্ক থামেনি। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে টোল প্লাজায় টাকা তোলার মতো ভিত্তিহীন অভিযোগও ওঠে। সেই সময়েও বিজেপি এই ঘটনাকে ‘সেনাকে অপমান’ বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করেছিল।
সম্প্রতি মেয়ো রোডে তৃণমূল কংগ্রেসের একটি মঞ্চ ভেঙে ফেলে সেনাবাহিনী। যে জায়গাটিতে মঞ্চ বাঁধা হয়েছিল, সেটি সেনাবাহিনীর আওতাভুক্ত জমি। ঘটনার খবর পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্রুত ঘটনাস্থলে যান। তিনি অভিযোগ করেন, বিজেপি-র নির্দেশে সেনাবাহিনী এই কাজ করেছে এবং বিজেপি সেনাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে।
অন্যদিকে, সেনাবাহিনীর সিপিআরও গ্রুপ ক্যাপ্টেন হিমাংশু তিওয়ারি জানিয়েছেন, তিন দিনের বেশি কোনো অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অনুমতি লাগে। মঞ্চটি এক মাস ধরে সেখানে রাখা ছিল এবং মঞ্চ খোলার জন্য আয়োজকদের বারবার অনুরোধ করা হয়েছিল। কলকাতা পুলিশকে জানানোর পরেই সেনাবাহিনী মঞ্চটি খুলে ফেলে।
এই ঘটনার প্রতিবাদে বিধানসভায় শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু দাবি করেন, বাঙালি ও বাংলা ভাষার উপর হেনস্থার প্রতিবাদে মমতার আন্দোলন রুখতেই সেনা নামানো হয়েছে। এর জবাবে বিজেপিও ‘সেনাকে অপমান’ করার অভিযোগ তুলে তুমুল বিক্ষোভ শুরু করেছে। অতীতের মতোই বর্তমানের এই ঘটনায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ‘পুরনো মদ নতুন বোতলে’ ঢালার মতোই একটি চিত্র দেখতে পাচ্ছেন।