২.৫ বিলিয়ন গুগল ব্যবহারকারী ঝুঁকিতে, জি-মেইল অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখবেন যেভাবে

সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞের রিপোর্টে গুগল ব্যবহারকারীদের জন্য এক গুরুতর সতর্কতা জারি করা হয়েছে। হ্যাকাররা নতুন নতুন পদ্ধতিতে ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্টে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে, যার ফলে বিপুল পরিমাণ তথ্য ফাঁসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশ্বের প্রায় ২.৫ বিলিয়ন মানুষের ব্যবহৃত গুগল অ্যাকাউন্টের মধ্যে Gmail হলো ব্যক্তিগত ও পেশাগত যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম, যেখানে আমাদের সংবেদনশীল তথ্য যেমন—ব্যাংকিং, সামাজিক মাধ্যম এবং গুরুত্বপূর্ণ নথি থাকে। এই পরিস্থিতিতে আপনার Gmail অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
তবে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চললে আপনি সহজেই আপনার অ্যাকাউন্টকে হ্যাকিংয়ের হাত থেকে বাঁচাতে পারেন। জেনে নিন সেই ৭টি জরুরি পদক্ষেপ:
১. শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন
আপনার পাসওয়ার্ড কমপক্ষে ১২ অক্ষরের হওয়া উচিত, যেখানে বড় হাতের অক্ষর, ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা এবং বিশেষ চিহ্নের মিশ্রণ থাকবে। জন্মতারিখ, মোবাইল নম্বর বা সহজে অনুমান করা যায় এমন কোনো তথ্য পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করবেন না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কোনো অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড অন্য কোনো অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করবেন না।
২. টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন চালু রাখুন
Gmail-এ লগইন করার সময় শুধু পাসওয়ার্ডই নয়, একটি অতিরিক্ত ভেরিফিকেশন কোড ব্যবহার করুন। এই কোড আপনার ফোনে SMS, কল বা গুগল অথেন্টিকেটর অ্যাপের মাধ্যমে আসতে পারে। যদি কোনো হ্যাকার আপনার পাসওয়ার্ড জেনেও যায়, টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন চালু থাকলে তার পক্ষে অ্যাকাউন্টে ঢোকা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।
৩. ডিভাইস ও লোকেশন নিয়মিত মনিটর করুন
Gmail সেটিংস-এর ‘লাস্ট অ্যাকাউন্ট অ্যাক্টিভিটি’ থেকে নিয়মিত দেখুন কোন কোন ডিভাইসে আপনার অ্যাকাউন্ট লগইন করা আছে। কোনো অপরিচিত ডিভাইস বা লোকেশন দেখলে সঙ্গে সঙ্গে তা থেকে সাইন আউট করুন।
৪. ফিশিং ই-মেইল থেকে সতর্ক থাকুন
অপরিচিত বা সন্দেহজনক ই-মেইল থেকে আসা কোনো লিংক বা অ্যাটাচমেন্টে ক্লিক করবেন না। অনেক সময় হ্যাকাররা ব্যাংক বা জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানের নামে নকল ই-মেইল পাঠায় আপনার ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার জন্য। যদি কোনো ই-মেইল সন্দেহজনক মনে হয়, তবে প্রেরকের ঠিকানা যাচাই করুন বা সরাসরি প্রতিষ্ঠানের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
৫. রিকভারি তথ্য হালনাগাদ রাখুন
আপনার Gmail অ্যাকাউন্টে রিকভারি ই-মেইল এবং মোবাইল নম্বর সবসময় আপডেটেড রাখুন। এতে কোনো কারণে অ্যাকাউন্ট হ্যাক হলে বা পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে দ্রুত তা পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।
৬. নিরাপদ ব্রাউজার ও অ্যাপ ব্যবহার করুন
সর্বশেষ আপডেট করা ব্রাউজার ব্যবহার করুন এবং কোনো অপরিচিত এক্সটেনশন বা অ্যাপ ইনস্টল করা থেকে বিরত থাকুন। পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করার সময় VPN ব্যবহার করা বুদ্ধিমানের কাজ, কারণ এই ধরনের নেটওয়ার্ক হ্যাকিংয়ের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
৭. গুগলের সিকিউরিটি চেকআপ ব্যবহার করুন
গুগল নিজেই তাদের ব্যবহারকারীদের জন্য ‘সিকিউরিটি চেকআপ’ টুলটি তৈরি করেছে। এটি দিয়ে আপনি সহজেই আপনার অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা যাচাই করতে পারেন। এই টুল আপনাকে ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাপ, পুরোনো ডিভাইস লগইন বা রিকভারি তথ্যের কোনো ঘাটতি থাকলে তা ঠিক করার পরামর্শ দেবে।
এই সহজ কিন্তু জরুরি পদক্ষেপগুলো মেনে চললে আপনার গুগল অ্যাকাউন্ট অনেক বেশি সুরক্ষিত থাকবে। এই সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে আপনার নিজের সচেতনতাই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।