বিশেষ: ভারতের কর্ণি মন্দিরের রহস্যময় ইতিহাস, ইঁদুরে পূজিত দেবী শক্তির কাহিনী জানেন কি?

ভারতের রাজস্থান রাজ্যের দেশনোক গ্রামে অবস্থিত করনি মাতার মন্দির একটি অনন্য ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এখানে প্রতি বছর হাজার হাজার ভক্ত আসেন ইঁদুরদের পূজা করতে। কারণ তারা বিশ্বাস করেন যে এই প্রাণীগুলো দেবী করনি মাতার আশীর্বাদের প্রতীক। বর্তমানে মন্দিরে প্রায় ২৫ হাজার ইঁদুর বাস করছে, যা এই স্থানটিকে আরো বিশেষ করে তুলেছে।

স্থানীয়দের মতে, করনি মাতা হলেন দেবী দুর্গার একটি বিশেষ রূপ। তার পৌরাণিক কাহিনি মন্দিরের চারপাশে রহস্যময়তা তৈরি করেছে।

জানা যায়, করনি মাতার সৎ ছেলে লক্ষ্মণ একবার স্থানীয় কপিল সরোবরে ডুবে মারা যান। সেই মুহূর্তে, করনি মাতার যমরাজের কাছে তার সন্তানের প্রাণভিক্ষা চাওয়ার পর, যমরাজ তার সমস্ত সন্তানকে ইঁদুরে পরিণত করেন। এই ঘটনার পর থেকে মন্দিরে ইঁদুরদের পূজা শুরু হয়েছে, যা ভক্তদের কাছে করনি মাতার আশীর্বাদের চিহ্ন।

মন্দিরে প্রতি বছর নবরাত্রির সময় ভক্তদের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি হয়। এই সময় ভক্তরা দুধ, মিষ্টি এবং অন্যান্য খাবার ইঁদুরদের সামনে সাজিয়ে দেন। বিশাল বাটিতে এসব খাদ্য রেখে, তারা ইঁদুরদের প্রতি স্নেহ প্রদর্শন করেন, সঙ্গে খেলেন এবং তাদের শান্তি ও সুস্থতা কামনা করেন।

মন্দিরে আসা এক ভক্ত বলেন, ‘প্রতি বছর নবরাত্রির সময় এখানে আসি। এটি এক বিশেষ অনুভূতি। ইঁদুর আমাদের মা দুর্গার অংশ, তাই তাদের প্রতি আমাদের প্রণাম’।

অন্য আর এক ভক্ত বলেন, ‘ইঁদুরদের ভোগ হিসেবে আমরা লাড্ডু, দুধ মিষ্টি, চানা দিয়ে থাকি’।

প্রতিবছর মার্চ থেকে এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসে এখানে বড় মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই মেলায় দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এসে ইঁদুর-পূজা করেন।

ইঁদুর-পূজা করতে আসা আরো এক ভক্ত বলেন, ‘ইঁদুরের দর্শনের জন্য আমি এখনে প্রতিমাসে একবার করে আসি। প্রায় ৪০ বছর ধরে নিয়মিত আসছি’।

কর্ণী মাতার মন্দিরের ইতিহাস ১৩৭৮ সাল থেকে শুরু। এই দেবী শক্তি, সুরক্ষা, মাতৃত্ব এবং যুদ্ধের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। দেবী করনি মাতার প্রতি এই পূজা ভক্তদের মধ্যে গভীর আধ্যাত্মিক সম্পর্ক তৈরি করে।