সুপ্রিম কোর্টে E20 পেট্রোল নিয়ে শুনানি, জেনে নিন পুরো বিতর্ক আসলে কী ?

ভারতে ২০% ইথানল মিশ্রিত পেট্রোল বা E20 জ্বালানি চালু হওয়ার পর থেকেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই জ্বালানি নিয়ে গাড়ি মালিকদের অভিযোগের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট আজ (সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর) একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানি শুরু করেছে। প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাইয়ের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ এই মামলার শুনানি করবে।
কী এই E20 জ্বালানি?
E20 জ্বালানি হলো ৮০% পেট্রোল এবং ২০% ইথানলের মিশ্রণ। ইথানল এক ধরনের অ্যালকোহল, যা সাধারণত চিনি বা শস্য থেকে তৈরি হয়। ভারত সরকার ২০২৩ সাল থেকে ধীরে ধীরে এই জ্বালানি বাজারে এনেছে। এর মূল লক্ষ্যগুলো হলো:
- তেল আমদানি কমানো: দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে তেলের আমদানি কমানো।
- দূষণ নিয়ন্ত্রণ: কার্বন নির্গমন কমিয়ে পরিবেশ দূষণ কমানো।
- কৃষকদের সহায়তা: আখ ও অন্যান্য শস্য উৎপাদক কৃষকদের জন্য নতুন বাজার তৈরি করা।
কেন বিতর্ক হচ্ছে?
E20 জ্বালানি নিয়ে গাড়ি মালিকদের প্রধান অভিযোগগুলো হলো:
১. মাইলেজ কমে যাওয়া: অনেক গাড়ি এবং বাইক মালিকের দাবি, এই জ্বালানি ব্যবহারের ফলে তাদের গাড়ির মাইলেজ ১০% পর্যন্ত কমে গেছে। ফলে ইথানল সস্তা হলেও তাদের খরচ বেড়েছে। ২. পুরোনো গাড়িতে সমস্যা: ২০২৩ সালের আগে তৈরি গাড়িগুলোর ইঞ্জিন E20 ব্যবহারের জন্য উপযোগী নয়। এই জ্বালানি ব্যবহারে ইঞ্জিনে মরিচা, রাবারের পাইপ নষ্ট হওয়া এবং মাইলেজ কমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ৩. আসল দামে কোনো পরিবর্তন নেই: ইথানল পেট্রোলের চেয়ে সস্তা হলেও, বাজারে E20 পেট্রোলের দাম সাধারণ পেট্রোলের সমান।
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?
ভারতের অটোমোবাইল নির্মাতাদের সংগঠন SIAM-এর নির্বাহী পরিচালক পি কে ব্যানার্জি বলেছেন, মাইলেজ ৫০% কমে যাওয়ার দাবিটি ভুল। তিনি বলেন, বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে মাইলেজ ২-৪% কমতে পারে, তবে রাস্তায় এর প্রভাব আরও বেশি হতে পারে।
এদিকে, পরিবেশবাদীরা বলছেন, ইথানলের জন্য বেশি আখ চাষ করলে দেশের জলসংকট আরও বাড়বে। এছাড়া, পরিবেশের ওপর E20 এর প্রভাব কতটা ইতিবাচক হবে, তা নিয়েও সন্দেহ আছে।
মামলার বাদী পক্ষ সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছে যে, প্রতিটি পেট্রোল পাম্পে E20-এর পাশাপাশি ইথানলবিহীন সাধারণ পেট্রোলও (E0) রাখার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে মানুষ তাদের পছন্দ অনুযায়ী জ্বালানি কিনতে পারে।