‘SSC’-এর ‘অযোগ্য’ তালিকা ঘিরে চাপানউতোর, তালিকায় তৃণমূল নেতাদের আত্মীয়ের নাম!

সম্প্রতি স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC) নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশে শিক্ষক পদে ‘টেন্টেড’ বা সন্দেহভাজন প্রার্থীদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল এবং বিরোধী দল বিজেপি একে অপরের দিকে আঙুল তুলেছে।

বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ
বিজেপির দাবি, এই তালিকা থেকে প্রমাণিত হয় যে রাজ্য সরকার শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি করেছে। রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, “সরকার নিজেই প্রমাণ করল তারা চুরি করেছে। তৃণমূলের অনেক বড় নেতা এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, যা এই তালিকা থেকে স্পষ্ট। সরকারের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত।” বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, ‘৯০ ভাগ চাকরি টাকা দিয়ে আর ১০ ভাগ তৃণমূলের সুপারিশে হয়েছে’।

অন্যদিকে, তৃণমূল বিজেপিকে পাল্টা আক্রমণ করেছে। তারা বলছে, এসএসসি-র প্রকাশিত ১৮০৬ জনের তালিকার মধ্যে প্রায় ২০০ জনই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার, যা শুভেন্দু অধিকারীর গড়। তৃণমূলের অভিযোগ, যখন এই বেআইনি নিয়োগ চলছিল, তখন শুভেন্দু তৃণমূলে ছিলেন এবং পূর্ব মেদিনীপুরে দলের প্রধান নেতা ছিলেন। ফলে, এই দুর্নীতির সঙ্গে তারও যোগ থাকতে পারে। তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় নাম না করে শুভেন্দুকে বলেছেন, “এসএসসি-র তালিকা বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যাবে, বিজেপির কত লোক রয়েছে।”

তৃণমূল নেতাদের আত্মীয়ের নাম তালিকায়
এসএসসি-র এই তালিকায় তৃণমূল বিধায়ক ও বিধানসভার মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষের পুত্রবধূর নাম থাকার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও আরও বেশ কিছু তৃণমূল নেতা-নেত্রীর আত্মীয়ের নাম এই তালিকায় রয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। এই বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নির্মল ঘোষ বলেছেন, “আমি কিছু জানি না। আইন আইনের পথে চলবে।”

বিধানসভায় হট্টগোলের আশঙ্কা
আজ, সোমবার থেকে বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন শুরু হচ্ছে। এই অধিবেশনে বিজেপি এই ইস্যুটিকে সামনে এনে হট্টগোল করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। নির্মল ঘোষের পুত্রবধূর নাম থাকা সত্ত্বেও কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন তুলে বিজেপি বিধানসভায় শাসক দলকে চেপে ধরার চেষ্টা করতে পারে।

তবে, তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অরূপ চক্রবর্তী বলেছেন, “বিরোধীরা এখন রাজনীতি করার জন্য অনেক কথা বলবে। যে বিজেপি ত্রিপুরা ও মধ্যপ্রদেশে নিয়োগ দুর্নীতি করেছে, তাদের মুখে বড় কথা মানায় না।”

শুধু বিজেপি নয়, সিপিএম এবং কংগ্রেসও একই সুরে তৃণমূলের সমালোচনা করেছে। সিপিএমের সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন, “এই তালিকায় বেশিরভাগই তৃণমূলের লোক।” কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী মন্তব্য করেছেন, “তৃণমূলের হাঁড়ি হাটে ভেঙে গিয়েছে। রাজ্য সরকারের উচিত আদালতে গিয়ে ক্ষমা চাওয়া।”