হাম দো, হামারা তিন’ — হঠাৎ কেন এই স্লোগান? জনসংখ্যা নিয়ে আরএসএস প্রধানের নতুন ভাবনা

‘হাম দো, হামারে দো’— এই স্লোগানটি এতদিন ধরে ভারতীয়দের মনে গেঁথে ছিল। কিন্তু এখন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবত বলছেন, দুটি নয়, তিনটি সন্তানের কথা ভাবতে। সম্প্রতি নাগপুরে এক সভায় তিনি বলেছেন, দেশের জন্মহার কমে যাওয়ায় সমাজ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। তাই জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমাটা উদ্বেগের বিষয়।
জনসংখ্যা নিয়ে আরএসএসের নতুন তত্ত্ব
মোহন ভাগবত জানিয়েছেন, যদি কোনো সমাজের জন্মহার ২.১-এর নিচে নেমে যায়, তবে সেই সমাজ বহিরাগত আক্রমণ ছাড়াই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। তার মতে, আদর্শ জন্মহার হলো ২.১, কিন্তু যেহেতু ০.১ সন্তান সম্ভব নয়, তাই দুটি সন্তানের বদলে তিনটি সন্তানের কথা ভাবা উচিত।
তার এই বক্তব্যের পেছনে আছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। যেমন, চীনের জন্মহার বর্তমানে ১.০৯-এ নেমে এসেছে, যা বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন। একসময় চীন কঠোর জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতি নিয়েছিল, আর আজ তারাই জনসংখ্যা কমে যাওয়ায় ভুগছে। ভারতও একই পথে হাঁটছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৫০ সালে ভারতে একজন নারীর গড়ে ৬টি সন্তান ছিল, যা এখন নেমে এসেছে দুইয়ে। বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোতে এই হার আরও কমে ১.৬-এ দাঁড়িয়েছে। জন্মহার কমে গেলে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমে যায় এবং বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ে, যা অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
‘ডিএনএ’ এবং ‘হিন্দুত্ব’
মোহন ভাগবত তার বক্তব্যে সরাসরি হিন্দু-মুসলিম প্রসঙ্গ না তুললেও ডিএনএ-র কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, সব ভারতীয়ের ডিএনএ এক, অর্থাৎ ভারতীয় মুসলিমরাও এককালে ‘হিন্দু’ ছিলেন। আরএসএস একসময় ‘হিন্দু खतरे মে হ্যায়’ স্লোগান দিয়েছিল এবং হিন্দুদের বেশি সন্তান নেওয়ার পরামর্শ দিত। কিন্তু এখনকার বক্তব্যে দেখা যাচ্ছে, তাদের অবস্থান হয়তো বদলাচ্ছে। সম্ভবত দেশের মুসলিমদের মধ্যে সন্তান গ্রহণের হার কমে যাওয়ায় আরএসএস সামগ্রিক জনসংখ্যার ওপর জোর দিচ্ছে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
মোহন ভাগবতের এই মন্তব্যের পর রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক শুরু হয়েছে। হায়দরাবাদের সাংসদ আসাউদ্দিন ওয়েসি প্রশ্ন তুলেছেন, “যদি জন্মহার বাড়ানোই উচিত হয়, তবে এতদিন কেন বলা হলো মুসলিমদের জনসংখ্যা হিন্দুদের ছাড়িয়ে যাবে?”
সাধারণ মানুষের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকেই বলছেন, একজন সন্তান লালন-পালন করতেই অনেক খরচ হয়, সেখানে তিনটি সন্তান সামলানো অসম্ভব। নতুন প্রজন্মের অনেক দম্পতি এখন ‘ডাবল ইনকাম, নো কিডস’ (Double Income No Kids) নীতি মেনে চলছেন, কারণ তাদের কাছে সন্তান পালন একটি ‘অতিরিক্ত খরচ’ বলে মনে হচ্ছে।
সব মিলিয়ে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ে মোহন ভাগবতের মন্তব্য সমাজে একটি নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।