ভিতরে ঢুকলে হারিয়ে যাবেন! বাংলার রহস্যময় মন্দির, যেখানে একসময় আসতেন স্বয়ং রামকৃষ্ণদেব

হুগলির বাঁশবেড়িয়ার নাম শুনলে অনেকের মনে প্রথমেই আসে হংসেশ্বরী মন্দিরের কথা। এই মন্দির শুধু একটি উপাসনালয় নয়, এটি একটি রহস্যময় স্থাপত্য, যা দেখলে মনে হয় যেন কোনো তান্ত্রিক গোলকধাঁধা। প্রায় ২০০ বছরের পুরনো এই মন্দিরের প্রতিটি ইঁট আর পাথরে মিশে আছে এক অদ্ভুত গল্প।

তন্ত্র সাধনার মন্দির
কথিত আছে, রাজা নৃসিংহদেব বেনারসে তন্ত্র সাধনা শিখেছিলেন, বিশেষ করে মানবদেহের ‘কুণ্ডলিনী’ ও ‘ষড়চক্র’ নিয়ে। পরে তিনি বাঁশবেড়িয়ায় ফিরে সেই তন্ত্র তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে এই মন্দির তৈরির পরিকল্পনা করেন। তিনি চেয়েছিলেন মন্দিরের স্থাপত্যে মানবদেহের শক্তিচক্রের প্রতিফলন ঘটাতে। মন্দিরের পাঁচটি প্রধান সিঁড়ি মানবদেহের পাঁচটি নাড়ির মতো, আর ১৩টি চূড়া প্রতীকীভাবে শরীরের শক্তি কেন্দ্রগুলোকে তুলে ধরে। এই মন্দিরের গর্ভগৃহকে বলা হয় ‘মূলাধার চক্র’।

মন্দিরের কাজ শুরু হলেও, রাজা নৃসিংহদেব তা শেষ করে যেতে পারেননি। তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী, রানী শঙ্করী, এই অসমাপ্ত কাজ সম্পূর্ণ করেন।

দেবী হংসেশ্বরীর মূর্তি
মন্দিরের মূল দেবী হলেন হংসেশ্বরী। তার মূর্তিটি নিমকাঠ দিয়ে তৈরি, যা নাকি জলে ভেসে এসেছিল। নীল রঙের চতুর্ভুজা দেবী পদ্মাসনে বসে আছেন। তার এক হাতে খড়গ ও নরমুণ্ড এবং অন্য হাতে অভয়মুদ্রা ও শঙ্খ। মহাদেবের বুকের ওপর তার একটি পা রাখা আছে। মন্দিরের পুরোহিতদের কথায়, রাজা স্বপ্নাদেশ পেয়েই এই মন্দির বানিয়েছিলেন।

মায়ের রূপবদল এবং অন্যান্য রহস্য
এই মন্দিরে একটি বিশেষ দিনে মায়ের রূপ বদলে যায়। কালীপূজার দিন সন্ধ্যায় আরতির পর কয়েক ঘণ্টার জন্য মা হংসেশ্বরীকে রাজবেশ পরানো হয়। তার মুখে রুপোর মুখোশ এবং সোনার জিভ পরিয়ে দেওয়া হয়। এই দিন তন্ত্রমতে মায়ের পূজা হয়।

আগে এই মন্দিরে নিয়মিত পশুবলি দেওয়া হতো, কিন্তু ২০২৩ সাল থেকে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে মন্দিরটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ দ্বারা সংরক্ষিত হলেও, এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব এখনো রাজবাড়ির সদস্যদের হাতেই রয়েছে।

আপনি যদি বাংলার এমন এক রহস্যময় স্থান দেখতে চান, তাহলে একবার ঘুরে আসতে পারেন বাঁশবেড়িয়ার এই হংসেশ্বরী মন্দিরে। এখানকার শান্ত পরিবেশ এবং স্থাপত্যের সৌন্দর্য আপনার মনকে মুগ্ধ করবে।