‘মা তো মরে গেছে!’-মেরে বাড়ি থেকে বের করে বিডিও-কে জানালো ছেলে, চাঞ্চল্য ঘটনায়

এক হৃদয়বিদারক ঘটনা সামনে এল হুগলি জেলার পুরশুড়া থেকে। অভিযোগ উঠেছে, নিজের গর্ভধারিণী মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন এক ব্যক্তি। মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়ার পর ব্লক অফিসে গিয়ে তিনি জানিয়ে এসেছেন যে তার মা আর বেঁচে নেই। এরপর থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধা চাঁপা প্রামাণিক গৃহহীন হয়ে পুরশুড়া ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালের গেটে পড়ে আছেন।

বৃদ্ধা চাঁপা দেবী অভিযোগ করেছেন যে তার ছেলে গৌতম এবং তার স্ত্রী (বৌমা) তাকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, তার জায়গা-জমির দলিলও কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং তার থাকার ঘরটিও ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

গণমাধ্যম তার ছেলে গৌতমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে সবকিছু অস্বীকার করে। গৌতম জানায়, “কে ওই মহিলা? ও আমার মা নয়। ওকে মেরে তাড়িয়েছি, বেশ করেছি। আমাকে কিছুই দেয়নি, তাই তাড়িয়ে দিয়েছি। এখানে কোনো ঠাঁই হবে না। যেমন পারে, থাকুক। আমি কিছুই করব না।”

রাস্তার ধারে অসহায় জীবন

প্রায় দুই মাস ধরে এই বৃদ্ধা হাসপাতালের গেটে একা পড়ে আছেন। সন্ধ্যার পর থেকে এলাকায় শেয়ালের উপদ্রব বেড়ে যায়। স্থানীয়রা বলছেন, যেকোনো মুহূর্তে কিছু একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

স্থানীয় চা দোকানি খোকন ধক নিজের স্বল্প আয় থেকে তাকে চা, পাঁউরুটি, বিস্কুট এবং মুড়ি খাওয়ান। হাসপাতালের এক রাঁধুনিও তাকে দুপুরে খাবার দিয়ে যান। কিন্তু হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের নাকি এই বিষয়ে আপত্তি আছে।

সরকারি প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত

বৃদ্ধা চাঁপা প্রামাণিক তার প্রাপ্য বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা এবং বাংলার বাড়ির সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন। তিনি জানান, একবার বার্ধক্য ভাতা পেয়েছিলেন, কিন্তু তারপর আর পাননি। তিনি বিডিও অফিসে গেলে তাকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু কোনো কিছুই দেওয়া হয়নি। অভিযোগ উঠেছে যে, তার ছেলে তার আধার কার্ড নিয়ে ব্লক অফিসে গিয়ে জানিয়েছে যে তার মা মারা গিয়েছেন, যার ফলে তিনি সরকারি সুবিধা পাচ্ছেন না।

এই অমানবিক ঘটনাটি নজরে আসার পর পুরশুড়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শেখ খোকন বলেছেন, তিনি অবিলম্বে এই বিষয়টি দেখবেন। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বৃদ্ধা যেন সব সুবিধা পান, তার ব্যবস্থা করা হবে এবং তার নির্দয় ছেলের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।