“২৪-এ টিকিট না পেলে তৃণমূলে চলে যেত”- পরস্পরকে আক্রমণে শান্তনু ও সুব্রত ঠাকুর, দ্বন্দ্ব দুই ভাইয়ের

উত্তর ২৪ পরগণার ঠাকুরনগরের রাজনৈতিক মহলে এখন চরম উত্তেজনা। মতুয়াদের ভোটব্যাঙ্ককে কেন্দ্র করে ঠাকুরবাড়ির দুই প্রভাবশালী সদস্য, বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর এবং তাঁর বড় দাদা, গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রত ঠাকুরের মধ্যে দীর্ঘদিনের পারিবারিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্যে এসেছে। মতুয়া কার্ড ও ধর্মীয় শংসাপত্র বিলি নিয়ে শুরু হওয়া এই বিবাদ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, একে অপরের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন তাঁরা, যা আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে মতুয়া ভোট নিয়ে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে।
বিবাদের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ঠাকুরনগরের নাটমন্দির। সুব্রত ঠাকুরের অভিযোগ, শান্তনু ঠাকুর সেখানে ধর্মীয় পরিচয়পত্র বিতরণের নামে নাটমন্দিরের জায়গা দখল করছেন। সুব্রতর দাবি, অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের মহাসঙ্ঘাধিপতি হিসাবে ওই স্থানের উপর তাঁর অধিকার রয়েছে। তিনি বলেন, “নাটমন্দিরটা হরি মন্দিরের সামনে। একদিন কিছু করলে আলাদা ব্যাপার। পাকাপাকি হলে ভক্তরা কোথায় যাবে?” সুব্রত এও অভিযোগ করেন, শান্তনু তাঁকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, “তোকে কে টিকিট দেয় আমি দেখব।” এমনকি শান্তনু তাঁর মা ছবিরানি ঠাকুরকেও অপমান করেছেন বলে দাবি সুব্রতর।
সুব্রতর অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে শান্তনু ঠাকুর পাল্টা দাবি করেছেন যে, তাঁর দাদা রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তনের জন্য এই “নাটক” করছেন। শান্তনুর মতে, সুব্রত তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। তিনি বলেন, “সুব্রত ঠাকুর রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তনের জন্য এই নাটক করছেন। আমি জেতার পর হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন… এখন হিংসের কারণ হচ্ছে, শান্তনু ঠাকুর কেন উপরে উঠে গেল? শান্তনু ঠাকুর কেন মন্ত্রী হল?” শান্তনু জানান, তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের অনুমতিতেই সিএএ আবেদনকারীদের মধ্যে পরিচয়পত্র বিলি করছেন। এই বিষয়ে তিনি সুব্রত ও তাঁর জেঠিমা মমতাবালার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই একটি ভিডিও প্রকাশ্যে আসে, যেখানে দেখা যায় সুব্রত ঠাকুর এবং তাঁর মা ছবিরানি ঠাকুর তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর এবং বাগদার বিধায়ক মধুপর্ণা ঠাকুরের সঙ্গে বৈঠক করছেন। সুব্রত স্বীকার করেছেন যে, তাঁরা রাজনৈতিক বিষয় নয়, বরং পারিবারিক বিষয় নিয়েই আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “রাজনীতি পরে, আগে পরিবার।” এই বৈঠকে মমতাবালা ঠাকুরও দুই ভাইয়ের সমান অধিকারের পক্ষে সওয়াল করেন এবং বলেন যে, নাটমন্দিরে বসে মতুয়াদের “হিন্দু” বানানোর চেষ্টা চলছে।
তবে, এই পারিবারিক ফাটল শুধু দুই ভাইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সুব্রত এবং শান্তনুর মা ছবিরানি ঠাকুর তাঁর দুই ছেলের সমান অধিকারের দাবিতে মমতাবালার কাছে সাহায্য চেয়েছেন, অন্যদিকে তাঁদের বাবা মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর শান্তনুর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, শান্তনু তাঁর অনুমতি নিয়েই পরিচয়পত্র বিতরণের কাজ করছেন এবং সুব্রতর অভিযোগ মিথ্যা। এই ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যেও উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
দুই ভাইয়ের এই দ্বন্দ্ব এবং রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা এখন তুঙ্গে। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই সংঘাত মতুয়াদের ভোট কোন দিকে যাবে, সে বিষয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।