“রাজ্যের এই অবস্থান দুঃখজনক”-মুখ্যমন্ত্রীর ভ্রাতৃবধূ যুক্ত, বিচারপতিকে মামলা থেকে সরার জন্য চাপ!

রানি বিড়লা গার্লস কলেজের অধ্যক্ষের মামলাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে এক নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু এবং রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্তের মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ এবং মতবিরোধের জেরে শেষ পর্যন্ত বিচারপতি মামলাটি থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। এই ঘটনা আদালতের মর্যাদাকে আঘাত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিচারপতি বসু।
ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন কলেজের অধ্যক্ষ তার বিরুদ্ধে জারি করা ‘শো-কজ’ নোটিসকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে আবেদন জানান। এই নোটিসটি জারি করেছিলেন কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি মুখ্যমন্ত্রীর ভ্রাতৃবধূ। অধ্যক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশের জন্য শুনানি শুরু করে।
শুনানি শেষে যখন বিচারপতি রায় ঘোষণা করতে যাচ্ছিলেন, তখন এজি কিশোর দত্ত আপত্তি তোলেন। তিনি দাবি করেন, তার সওয়াল এখনও শেষ হয়নি এবং তিনি বিচারপতিকে এই মামলা থেকে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। বিচারপতি বসু এজিকে আরও একবার সওয়াল করার সুযোগ দিতে রাজি হলেও, এজি তার অবস্থানে অনড় থাকেন এবং বারবার বিচারপতিকে মামলাটি থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য জেদ করতে থাকেন।
বিচারপতি বসু তার রায়ে রাজ্যের এই অবস্থানকে ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “এটি একটি বিব্রতকর পরিস্থিতি, যা আদালতের মর্যাদাকে গভীরভাবে আঘাত করেছে।” বিচারপতি তার নির্দেশে উল্লেখ করেন যে, যখন কোনো পক্ষ আদালতের প্রতি আস্থা রাখতে ব্যর্থ হয়, তখন সেই মামলা ছেড়ে দেওয়াই ভালো। তিনি আরও বলেন, “বিচার শুধু হতে হবে তা নয়, বিচার হচ্ছে তা দেখাতেও হবে।”
বিচারপতি বসু জানান, এই মামলার শুনানি ৬ আগস্ট শুরু হয়েছিল এবং একাধিকবার পিছিয়ে দেওয়া হয়। ১১ আগস্ট সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আজ অন্তর্বর্তী নির্দেশ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল। এরপরও রাজ্যের পক্ষ থেকে মামলা থেকে সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ আদালতকে বিস্মিত করে।
শেষ পর্যন্ত, বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু এই মামলা থেকে অব্যাহতি নেওয়ার ঘোষণা দেন এবং জানান যে এই বিষয়ে তিনি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করবেন। এই ঘটনা বিচারব্যবস্থার কার্যকারিতা এবং আদালতের প্রতি সরকারি পক্ষের আচরণ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।