পথকুকুর ইস্যুতে পুরসভাকে তুলোধনা, কঠোর বার্তা দিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

পথকুকুরদের কামড়, জলাতঙ্ক এবং রাস্তায় নিরাপত্তাহীনতার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে উদ্বেগ বাড়ছে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট এই সমস্যার মূল কারণ হিসেবে স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেছে। এই সমস্যা নিরসনে শীর্ষ আদালতের দেওয়া একটি নির্দেশকে ঘিরে তীব্র বিতর্ক শুরু হওয়ায়, বুধবার মামলাটি তিন বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

আদালতের নির্দেশে বিতর্ক:

চলতি সপ্তাহে বিচারপতি সন্দীপ মেহতা ও বিচারপতি আর মহাদেবন একটি নির্দেশ দেন, যেখানে বলা হয় যে দিল্লি ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে সমস্ত পথকুকুরদের সরিয়ে ডগ শেল্টারে রাখতে হবে। এই নির্দেশটি বিতর্কের জন্ম দেয়। এরপর মামলাটি বিচারপতি বিক্রম নাথ, বিচারপতি সন্দীপ মেহতা এবং বিচারপতি এনভি আঞ্জারিয়ার সমন্বয়ে গঠিত একটি বেঞ্চে স্থানান্তরিত করা হয়।

সরকারের বক্তব্য ও পরিসংখ্যা:

মামলার শুনানিতে দিল্লি সরকারের পক্ষ থেকে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, প্রতি বছর ভারতে প্রায় ৩৭ লক্ষ মানুষ কুকুরের কামড়ের শিকার হন। এর মধ্যে গত বছর জলাতঙ্কে ৩০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলে মনে করে। তিনি আরও জানান, শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে এবং রাস্তায় নিরাপত্তাহীনতা ক্রমশ বাড়ছে।

আইনজীবীদের পাল্টা যুক্তি:

অন্যদিকে, প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিব্বল এই নির্দেশের বিরুদ্ধে যুক্তি দিয়ে বলেন, যদি যথেষ্ট সংখ্যক শেল্টার না থাকে, তাহলে কুকুরদের কোথায় রাখা হবে? তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, নির্বীজকরণের পর কুকুরদের তাদের এলাকা থেকে সরিয়ে দিলে অন্য কুকুরদের সঙ্গে তাদের লড়াই বাড়বে। আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি দাবি করেন, দিল্লি, গোয়া এবং রাজস্থানে ২০২২ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত জলাতঙ্কে কোনো মৃত্যু হয়নি।

সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ:

শীর্ষ আদালত পর্যবেক্ষণ করে জানায়, স্থানীয় প্রশাসনের আইন থাকা সত্ত্বেও তা কার্যকর করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আদালত মনে করে যে, এই সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনেরই। কেন্দ্র এবং অন্যান্য পক্ষের বক্তব্য শোনার পর, আদালত আপাতত রায়দান স্থগিত রেখেছে।

সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, একদিকে পশুপ্রেমীরা কুকুরদের নিরাপত্তা চায় এবং অন্যদিকে সাধারণ মানুষ কুকুরের কামড় ও জলাতঙ্ক নিয়ে আতঙ্কে ভুগছে। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট মনে করছে, যারা মামলার স্থগিতাদেশের আবেদন করছেন, তাদের সবারই এই সমস্যার দায় নিতে হবে।