ট্রেনের কামরায় ৭৪ হাজার সিসিটিভি ক্যামেরায় নজরদারি, বড় উদ্যোগ নিলো রেল

ভারতীয় রেলের যাত্রী সুরক্ষার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেশের ১৫ হাজার লোকো ট্রেন এবং ৭৪ হাজার কামরায় ক্লোজ়-সার্কিট টিভি (সিসিটিভি) বসানোর অনুমোদন দিয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। নর্দার্ন রেলওয়ের বিভিন্ন শাখায় সফল পরীক্ষার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই নতুন উদ্যোগটি যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ট্রেনে অপরাধমূলক কার্যকলাপ কমাতে বিশেষভাবে কার্যকর হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
যাত্রী নিরাপত্তা এবং নজরদারি বৃদ্ধি:
ভারতীয় রেলের এই পরিকল্পনা বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলায় সাহায্য করবে। যেমন:
- অপরাধ দমন: অসতর্ক যাত্রীদের জিনিসপত্র চুরি বা ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রতিরোধ করা।
- সন্ত্রাসী কার্যকলাপ রোধ: দাগি অপরাধীদের সহজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পালিয়ে যাওয়া ঠেকানো।
- যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য: বৈধ টিকিটধারী যাত্রীদের আসন দখল করা থেকে স্থানীয় ‘বাহুবলী’দের বিরত রাখা।
- বিরোধ এড়ানো: যাত্রী এবং রেলকর্মীদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা দ্রুত শনাক্ত করে সমাধান করা।
প্রযুক্তিগত দিক এবং কার্যকারিতা:
রেলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতিটি কামরার প্রবেশ পথে এবং ভেতরে মোট ছয়টি করে ক্যামেরা বসানো হবে। শুধু কামরার ভেতর নয়, বাইরেও ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা অনুমোদন পেয়েছে। রেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ক্যামেরাগুলো এতটাই শক্তিশালী হবে যে, ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে চললেও এবং দিনের আলো কমে এলেও তা স্পষ্টভাবে কাজ করবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই ক্যামেরাগুলোর ছবি বিশ্লেষণ করার জন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে, যা নজরদারির কাজটি অনেক সহজ করে দেবে।
এআই-ভিত্তিক নজরদারি:
অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে, প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলাচলকারী দশ হাজারের বেশি ট্রেনের সব কামরায় এভাবে নজরদারি রাখা কি সম্ভব? এর জবাবে রেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এআই প্রযুক্তির সাহায্যে ক্যামেরা ফিড বিশ্লেষণ করার কাজটি অনেক সহজ হবে এবং বিপুল পরিমাণ ডেটা থেকে অস্বাভাবিক কার্যকলাপ দ্রুত চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।
রেল মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিদিন আড়াই কোটিরও বেশি যাত্রী ট্রেনে যাতায়াত করেন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং রেলের কামরায় নিত্যনৈমিত্তিক সমস্যাগুলো এড়াতে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো একটি অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো রকম আপস করতে নারাজ রেল কর্তৃপক্ষ।