IISER ছাড়তে চাইছেন অনিন্দিতা, কিছু পড়ুয়ার ব্যবহারে ব্যথিত অধ্যাপক-বিজ্ঞানী

এক সহ–গবেষক ও পিএইচডি গাইডের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে সম্প্রতি আত্মহত্যা করেছেন আইসার কলকাতার এক গবেষক পড়ুয়া। সেই ঘটনায় তোলপাড় পড়ে গিয়েছে কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানটিতে। পড়ুয়াদের ক্ষোভ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যে পিএইচডি গাইড, অধ্যাপক–বিজ্ঞানী অনিন্দিতা ভদ্রর মনে হচ্ছে রাতারাতি তিনি যেন ভিলেন হয়ে গিয়েছেন।

তাই আক্ষেপের সুরেই অনিন্দিতা বলছেন, ‘১৬ বছর তো হলো আইসার–এ। এ বার ভাবছি অন্য কোথাও যাব।’ কেন এই আক্ষেপ? তাঁর ল্যাবরেটরির গবেষক অনমিত্র রায়ের আত্মহত্যার পর থেকেই তিনি যে ভাবে পড়ুয়াদের একাংশের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন, তা দেখে অনিন্দিতার বক্তব্য, ‘আমি ভাবতাম ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আমার দারুণ সম্পর্ক। কিন্তু কোনও কথা না শুনেই, যে ভাবে ওঁরা মব লিঞ্চিংয়ের (গণধোলাই) মতো আচরণ করেছে, তাতে আমার সেই বিশ্বাস ভেঙে গিয়েছে।’

কিন্তু অনেকেই বলছেন পড়ুয়াদের ক্ষোভও তো অকারণে নয়। মৃত গবেষক অনমিত্র তাঁর শেষ ফেসবুক পোস্টে সরাসরি দু’জনকেই দায়ী করে গিয়েছেন। ল্যাবের এক গবেষকের বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতন, র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ তুলেছিলেন অনমিত্র।

আর অনিন্দিতার বিরুদ্ধে সেই অভিযুক্তকেই আড়াল করা, প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করেন তিনি। কাঠগড়ায় উঠেছেন অনিন্দিতার স্বামী অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কারণ, গত ১২ এপ্রিল অ্যান্টি র‍্যাগিং সেলের কাছে অনমিত্র অভিযোগ জানালেও সেই সেল নিষ্ক্রিয় ছিল বলে অভিযোগ। অয়ন ছিলেন ওই সেলের প্রধান। এখন অবশ্য তিনি পদত্যাগ করেছেন।

অনিন্দিতা জানান, তিনি অনমিত্রের মানসিক অবস্থার কথা জানতেন। তিনি যে নিয়মিত মানসিক রোগের ওষুধ খান সে ব্যাপারেও অবগত ছিলেন। অনিন্দিতা বলেন, ‘ও কথা বলত কম। তাই আমাকে মাঝেমধ্যেই ওর মনের কথা হোয়াটসঅ্যাপে লিখে পাঠাত। মৃত্যুর দু’দিন আগেও পাঠিয়েছিল। কিন্তু ভিতরে ভিতরে যে ও এতটা ভেঙে পড়েছে আমি বুঝতে পারিনি।’

যে সহ–গবেষকের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন অনমিত্র তাঁর ব্যাপারে অনিন্দিতার মূল্যায়ন, ‘ও খুবই ভদ্র ছেলে। মাস চারেক আগে ল্যাবে অনমিত্রর সঙ্গে ওর কথা কাটাকাটি হয়। ল্যাব প্রেজেন্টেশনের সময়ে অনমিত্র ওকে অত্যন্ত রুড ভাবে প্রশ্ন করে বিরক্ত করছিল। এ সব নিয়ে অনমিত্রর বিরুদ্ধে ওই ছেলেটি অভিযোগ জানাতে চেয়েছিল। কিন্তু অনমিত্রর মানসিক অবস্থার কথা ভেবেই আমি ওকে তা করতে বারণ করি।’

এখন অবশ্য অনিন্দিতার আফসোস অনমিত্রর মতো ওই সহ–গবেষকও যদি অভিযোগ জানিয়ে রাখত, তা হলে এতটা সমস্যায় পড়তে হতো না। অনিন্দিতা জানাচ্ছেন, তিনিই অনমিত্রর সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মিটিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু অনমিত্র তাঁর শেষ পোস্টে লিখেছেন, তেমন কিছু নয়, তিনি ওই গবেষকের থেকে লিখিত ক্ষমা চেয়েছিলেন মাত্র।

অনিন্দিতা বলছেন, ‘সেটা ওই ছেলেটির পক্ষে সম্ভব ছিল না। কারণ অনমিত্র পাবলিক অ্যাপোলজি চেয়েছিল। কিন্তু হেনস্থার অভিযোগ তো অনমিত্রর বিরুদ্ধে ছিল। আমারই ভুল, বিষয়টিকে অফিশিয়ালি মেটালে হয়তো এতটা সমস্যা হতো না।’

অনিন্দিতা চাইছেন, ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক। আপাতত তিনি ক্যাম্পাসে যাচ্ছেন না। সামনেই একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার রয়েছে, সেই সেমিনার থেকেও নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন অনিন্দিতা।