মুনিরের নিশানায় এবার মুকেশ আম্বানি, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে খুশি করার চেষ্টায় পাকিস্তান

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির সম্প্রতি আমেরিকায় পাকিস্তানি প্রবাসী সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে আবারও এক বিতর্কিত মন্তব্য করে আন্তর্জাতিক মহলে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছেন। তার এই বক্তব্য ভারতের অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্বকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে এবং এটি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের বর্তমান উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। মুনিরের এই মন্তব্য, যেখানে তিনি ধর্মীয় উপমা ব্যবহার করে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানিকে হুমকি দিয়েছেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা।

জেনারেল মুনির তার বক্তৃতায় দাবি করেন যে, “সুরা ফিল” এবং মুকেশ আম্বানির ছবি সম্বলিত একটি টুইটের মাধ্যমে ভবিষ্যতে পাকিস্তানের কর্মপরিকল্পনার একটি বার্তা দেওয়া হয়েছিল। তার হুমকি ছিল সুস্পষ্ট: “আমরা ভারতের পূর্ব দিক থেকে শুরু করব, যেখানে তাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ রয়েছে, এবং তারপর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হব।” তার এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি ভারতের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড, বিশেষ করে মুকেশ আম্বানির মতো শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতিদের, সরাসরি আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করেছেন। এর উদ্দেশ্য কেবল সামরিক শক্তিকে দুর্বল করা নয়, বরং ভারতের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সম্পদের উপর আঘাত হানা, যা ভারতের মধ্যে ভয় ও অস্থিতিশীলতা ছড়াতে পারে।

মুকেশ আম্বানি কেন লক্ষ্যবস্তু?

মুকেশ আম্বানিকে বেছে নেওয়ার কারণটি খুবই স্পষ্ট। তিনি শুধু একজন বিশিষ্ট শিল্পপতিই নন, তার কোম্পানি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ ভারতের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে, যা পাকিস্তানের বার্ষিক বাজেটের প্রায় দ্বিগুণ। ব্লুমবার্গের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আম্বানির সম্পদ ৮.৫ লক্ষ কোটি টাকার বেশি, যেখানে পাকিস্তানের পুরো বার্ষিক বাজেট মাত্র ৪.৫ লক্ষ কোটি টাকার কাছাকাছি। এই বিশাল অর্থনৈতিক ব্যবধান পাকিস্তানের গুরুতর আর্থিক সংকট এবং ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতির মধ্যেকার পার্থক্যকে তুলে ধরে। মুনির যখন আম্বানিকে লক্ষ্য করে হুমকি দেন, তখন তিনি কার্যত পাকিস্তানের দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থার কথা অনিচ্ছাকৃতভাবে প্রকাশ করে দেন।

মন্তব্যের পেছনের কূটনৈতিক চাল?

অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, মুনিরের এই মন্তব্য কেবল ভারত-বিরোধী বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ নয়, এর পেছনে গভীর কূটনৈতিক উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। কেউ কেউ এটিকে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে খুশি করার একটি সুচিন্তিত পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। কারণ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মার্কিন বাণিজ্য দাবির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন এবং রিলায়েন্স রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের একটি প্রধান পরিশোধক। ফলে এই হুমকি শুধু একজন ব্যক্তির প্রতি ছিল না, বরং এটি ভারতের স্বাধীন অর্থনৈতিক নীতির ওপরও একটি আক্রমণ। মুনিরের এই বক্তব্য ভারতের অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে একটি সরাসরি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গণ্য হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক মঞ্চে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।