‘জনগণমন অধিনায়ক’-কে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে কিভাবে নির্বাচিত করা হয় জানেন?

ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ‘জনগণমন অধিনায়ক’ শুধু একটি গান নয়, বরং দেশের ঐক্য, সার্বভৌমত্ব এবং ঐতিহ্যের প্রতীক। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা এই গানটি প্রতিটি ভারতীয়ের হৃদয়ে গভীর আবেগের জন্ম দেয়। কিন্তু কীভাবে এই গানটি ভারতের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে নির্বাচিত হলো, তা অনেকেরই অজানা।
ইতিহাসের প্রেক্ষাপট:
১৯১১ সালের ১১ ডিসেম্বর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘ভারতভাগ্যবিধাতা’ নামে এই গানটি রচনা করেন, যাতে পাঁচটি স্তবক ছিল। তবে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গাওয়া হয় এর প্রথম স্তবকটি। ১৯১১ সালের ২৭ ডিসেম্বর ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ২৬তম বার্ষিক অধিবেশনে গানটি প্রথমবার গাওয়া হয়। সেই সভায় তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি বিষাণ নারায়ণ ধর এবং অন্যান্য বড় বড় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় সঙ্গীতের স্বীকৃতি:
১৯৫০ সালের ২৪ জানুয়ারি ভারতের সংবিধান রচনার জন্য গঠিত গণপরিষদ (Constituent Assembly of India) ‘জনগণমন অধিনায়ক’-কে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। একই দিনে ‘বন্দে মাতরম’-কে জাতীয় স্তোত্র হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
নিয়মকানুন:
জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। সম্পূর্ণ গানটি ৫২ সেকেন্ডের মধ্যে গাইতে হয়। যদি সংক্ষেপে গাওয়ার প্রয়োজন হয়, তবে প্রথম এবং শেষ স্তবকের প্রথম ও শেষ দুটি লাইন গাইতে হয়, যা ২০ সেকেন্ডের মধ্যে শেষ করতে হয়। এক মিনিটের বেশি সময় ধরে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া যায় না।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান:
১৯৪১ সালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এই গানের একটি আলাদা সংস্করণ নিয়ে আসেন। নেতাজির নির্দেশে আজাদ হিন্দ ফৌজের ক্যাপ্টেন আবিদ আলি গানটি বাংলা থেকে ‘হিন্দুস্তানি’ ভাষায় অনুবাদ করেন এবং ক্যাপ্টেন রাম সিং তাতে সুর দেন। এই সংস্করণটি সমগ্র ভারতে গানটির জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়ে তোলে।
স্বাধীনতার পর এই গানটি ইংরেজি সহ ২২টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং এটি দেশের প্রতিটি প্রান্তে এক সূত্রে মানুষকে বেঁধে রাখে।