মালদহে ভুয়ো ডাক্তারের রমরমা, প্রশাসনকে তদন্তের নির্দেশ দিলেন জেলাশাসক

জেলার বিভিন্ন হাটে ভুয়ো ডাক্তারদের রমরমা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসায় নড়েচড়ে বসেছে মালদহ জেলা প্রশাসন। টিভি৯ বাংলায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ডাক্তারি ডিগ্রি ছাড়াই কিছু অসাধু ব্যক্তি বছরের পর বছর ধরে রোগী দেখছেন, ভুল চিকিৎসা করছেন এবং জাল ওষুধ বিক্রি করছেন। এই অভিযোগ সামনে আসতেই জেলাশাসক নিতিন সিংহানিয়া দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং এমন প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর কথা বলেছেন।

ভয়ঙ্কর চিত্র গোবরাঘাট হাটে:

মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের গোবরাঘাট হাটে এমন একাধিক ভুয়ো ডাক্তারের সন্ধান পাওয়া গেছে। তারা নিজেরাই স্বীকার করেছেন যে তাদের কোনো ডাক্তারি ডিগ্রি বা বৈধ কাগজপত্র নেই। তারা কেবল দেখে দেখে ডাক্তারি শিখেছেন এবং নিজেদের ডেন্টিস্ট বা মেডিসিনের ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, তারা রোগীদের প্রেসক্রিপশনও লিখছেন এবং জাল ওষুধ বিক্রি করছেন। এই ভয়ঙ্কর চিত্রটি সামনে আসার পর প্রশাসনের ওপর চাপ বেড়েছে।

প্রশাসনিক পদক্ষেপ ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া:

মালদহ জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি রফিকুল হোসেন এই ঘটনাকে ‘উদ্বেগের বিষয়’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, দ্রুত স্বাস্থ্য দফতর, জেলা প্রশাসন এবং জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য বিভাগকে নিয়ে একটি বৈঠক ডাকা হবে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে স্বাস্থ্য শিবির আয়োজন করে সঠিক স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি ফজলুর রহমান আরও বিস্ফোরক দাবি করেছেন। তার মতে, “শুধু একটি গ্রাম বা ব্লক নয়, সমগ্র জেলা জুড়ে প্রত্যেক গ্রামে ১০ থেকে ১২ জন করে এমন প্রতারক আছে। যাদের কোনো অক্ষরজ্ঞান নেই, তারা শুধু ওষুধের রঙ ও আকার দেখে রোগীদের হাতে তুলে দেয়। এভাবে দিনের পর দিন প্রতারণা করে তারা মোটা টাকা রোজগার করছে।”

মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুদীপ্ত ভাদুড়ি এই প্রসঙ্গে বলেন, “এরা হাতুড়ে ডাক্তারও নন। এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। পাশাপাশি, সাধারণ মানুষকেও এদের থেকে দূরে থাকতে সচেতন করা প্রয়োজন।” হরিশ্চন্দ্রপুর ২-এর বিডিও তাপস কুমার পাল জানিয়েছেন, তিনি ইতিমধ্যেই ব্লক স্বাস্থ্য দফতরকে এই বিষয়ে অবগত করেছেন।

জেলা প্রশাসন এখন এই প্রতারকদের ধরতে এবং জনসচেতনতা বাড়াতে কী পদক্ষেপ নেয়, সেটাই দেখার বিষয়।