৪ কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড না করায় মুখ্যসচিবকে তলব করল নির্বাচন কমিশন

৪ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার নির্দেশ না মানায় জাতীয় নির্বাচন কমিশন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে তলব করেছে। বুধবার বিকেল ৫টায় দিল্লিতে কমিশনের কার্যালয়ে তাকে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। নবান্ন সূত্রে জানা গেছে, মুখ্যসচিব দিল্লি যাচ্ছেন এবং নির্দিষ্ট সময়েই কমিশনের দফতরে হাজির হবেন।
নবান্ন ও কমিশনের সংঘাত:
আগামী বিধানসভা নির্বাচনের প্রায় ৮-৯ মাস আগেই রাজ্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যে সংঘাত ক্রমশ বাড়ছে। গত ৫ই আগস্ট নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্তির ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগে রাজ্যের চার সরকারি কর্মকর্তা এবং এক ডেটা এন্ট্রি অপারেটরকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছিল। একই সাথে তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করারও সুপারিশ করা হয়। কিন্তু রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় কমিশন আবারও কড়া চিঠি দিয়ে সোমবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেয়।
রাজ্য সরকার কমিশনের নির্দেশ পুরোপুরি পালন করেনি। একজন কর্মকর্তা এবং এক ডেটা এন্ট্রি অপারেটরকে নির্বাচন সংক্রান্ত প্রক্রিয়া থেকে সরানো হলেও বাকি তিনজনের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। রাজ্য সরকার এক চিঠিতে জানায়, এটি প্রাথমিক পদক্ষেপ। তাদের যুক্তি, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওপর অনেক দায়িত্ব থাকে, তাই বিস্তারিত তদন্ত ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে অন্যদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া:
এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেছেন, “নির্বাচন কমিশনের কোনো সরকারের ওপর কোনো কর্তৃত্ব নেই। বিজেপিকে খুশি করার জন্য কমিশন কাজ করছে।” তিনি বলেন, এই ধরনের হয়রানি বন্ধ হওয়া দরকার।
অন্যদিকে, বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল তৃণমূল সরকারের ওপর তোপ দেগে বলেন, “আপনারা যাদের দিয়ে দুর্নীতি করিয়েছেন, তাদের সাসপেন্ড করলে আপনারাই চাপে পড়ে যাবেন।” তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে কড়া শাস্তির দাবি জানান।
আইনি বিশ্লেষণ:
কলকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত এই বিষয়ে বলেন, যেহেতু রাজ্য সরকার কমিশনের নির্দেশ মানেনি, তাই কমিশনের সাংবিধানিক এবং আইনি ক্ষমতা রয়েছে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এফআইআর করার। তিনি আরও জানান, মুখ্যসচিবের দিল্লি সফর আলোচনা ও সমাধানসূত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যদি আলোচনা ব্যর্থ হয়, তাহলে কমিশন রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তক্ষেপের আবেদন করতে পারে অথবা উভয় পক্ষই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারে।