গালওয়ান পরবর্তী বরফ গলছে, সরাসরি বিমান পরিষেবা চালু করতে চলেছে ভারত ও চিন

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে যখন বিশ্ব বাণিজ্য মহলে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, ঠিক সেই সময়েই ভারত ও চিনের মধ্যে সম্পর্ক নতুন মোড় নিচ্ছে। দীর্ঘদিনের উত্তেজনা, বিশেষত গালওয়ান সংঘর্ষের পর, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান পরিষেবা পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একটি ব্লুমবার্গ রিপোর্ট অনুযায়ী, চিন ভারতের দিকে ইউরিয়া রপ্তানির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে শুরু করেছে, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বিমান পরিষেবা সেপ্টেম্বরেই:
জানা গিয়েছে, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ভারত ও চিনের মধ্যে সরাসরি বিমান পরিষেবা শুরু হতে পারে। দুই দেশের সরকারই এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে। সূত্র মারফত খবর, ভারত সরকার ইতিমধ্যেই দেশের বিমান সংস্থাগুলিকে দ্রুত পরিষেবা শুরুর জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছে। এই মাসের শেষে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO) শীর্ষ সম্মেলনের পরেই এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ইন্ডিগো-র মতো বিমান সংস্থাকে ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে প্রস্তুতি শুরু করতে বলা হয়েছে।
২০২০ সালের জুন মাসে পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় সীমান্ত সংঘর্ষের পর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছিল। সেই সময় থেকেই সরাসরি বিমান পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই সংঘর্ষে বহু ভারতীয় সেনা শহিদ হন এবং ভারত সরকার চিনের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ নেয়। এবার এই বিমান পরিষেবা পুনরায় চালুর উদ্যোগকে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বার্তা:
গত মাসে ভারত চিনা নাগরিকদের জন্য পর্যটন ভিসা পুনরায় চালু করার ঘোষণা করে। এবার সরাসরি বিমান পরিষেবা শুরু করার এই পদক্ষেপকে দুই দেশের মধ্যে সামরিক অচলাবস্থা কাটানোর জন্য একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবে ধরা হচ্ছে। আগামী ৩১শে আগস্ট ও ১লা সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী SCO শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে তিয়ানজিন যাচ্ছেন। এই সফরের আগে চিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মোদীর আগমনকে স্বাগত জানিয়েছে। চিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তিয়ানজিন শীর্ষ সম্মেলন সংহতি, বন্ধুত্ব ও ফলপ্রসূ ফলাফলের সমাবেশ হবে।’
ইউরিয়া রপ্তানিতে শিথিলতা:
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্পের শুল্কের ধাক্কার পরপরই চিন ভারতের প্রতি ইউরিয়া রপ্তানির ক্ষেত্রে যে কঠোরতা দেখিয়েছিল, তা কিছুটা শিথিল করছে। ভারত ৩০০,০০০ টন ইউরিয়া আমদানি করে, এবং চিন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইউরিয়া রপ্তানিকারক দেশ। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চিন ইউরিয়া রপ্তানি কমিয়েছিল, কিন্তু এখন ভারতের প্রতি তাদের বাণিজ্যিক অবস্থান বদলানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই পদক্ষেপ দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের একটি লক্ষণ।
রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক উভয় ক্ষেত্রেই এই নতুন পদক্ষেপগুলি ভারত-চিন সম্পর্ককে একটি নতুন দিগন্তে নিয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।