কর্ণাটকে চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড, শ্বাশুড়িকে খুন করে ১৯ টুকরো করল জামাই, পুলিশি তদন্তে রহস্যভেদ

কর্ণাটকের তুমাকুরু জেলায় এক নৃশংস হত্যাকাণ্ডের রহস্য ভেদ করেছে পুলিশ। এক পথচারীর দেওয়া খবরের ভিত্তিতে শুরু হওয়া তদন্তে জানা গেল, এক গৃহবধূকে খুন করে তার দেহকে ১৯ টুকরোয় কেটে ফেলেছিল তার জামাই ও তার দুই সঙ্গী। জামাইয়ের সন্দেহ ছিল যে তার শ্বাশুড়ি তাদের বিবাহিত জীবনে হস্তক্ষেপ করছেন।

ঘটনার সূত্রপাত ৭ই আগস্ট সকালে, যখন এক পথচারী পুলিশকে জানায় যে একটি কুকুর মানুষের কাটা হাত মুখে নিয়ে ঘোরাফেরা করছে। এই খবর পেয়ে পুলিশ কোরতাগেরে তালুকের চিম্পুগনাহল্লি গ্রামে তদন্ত শুরু করে। প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ দেহের ১৯টি টুকরো উদ্ধার করে, তবে মাথা পাওয়া যাচ্ছিল না। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেন, এটি একজন ৪৭ বছর বয়সী মহিলার দেহ।

পুলিশ মৃতদেহ শনাক্ত করার জন্য তুমাকুরু জেলার নিখোঁজ মহিলাদের তালিকা খতিয়ে দেখে এবং লক্ষ্মীদেবাম্মা নামে এক গৃহবধূর খোঁজ পায়, যার স্বামী বাসভরাজ তার নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, ৩ই আগস্ট লক্ষ্মীদেবাম্মা তার মেয়ে তেজাউইয়ের বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন এবং তারপর আর ফেরেননি। দু’দিন পর একটি নির্জন এলাকা থেকে মহিলার মাথা উদ্ধার হয় এবং বাসভরাজ তা শনাক্ত করেন।

তদন্তে একটি সাদা এসইউভি গাড়ি গুরুত্বপূর্ণ মোড় নেয়। ৩ই আগস্ট হনুমানতপুরা থেকে কোরতাগেরের দিকে যাওয়া এই গাড়িটির সামনে ও পেছনে দুটি ভুয়ো নম্বর প্লেট ছিল। পুলিশ আসল নম্বর প্লেট বের করে জানতে পারে, গাড়িটি সতীশের নামে রেজিস্টার করা। সতীশের মোবাইল রেকর্ড ও স্থানীয়দের তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ সতীশ এবং তার সঙ্গী কিরণকে গ্রেফতার করে।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গাড়িটির মালিক ড. রামচন্দ্রাইয়া, যিনি নিহত লক্ষ্মীদেবাম্মার মেয়ে তেজাউইয়ের স্বামী। ড. রামচন্দ্রাইয়াকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তিনি খুনের কথা স্বীকার করেন।

ড. রামচন্দ্রাইয়া পুলিশকে জানান, তার সন্দেহ ছিল যে শ্বাশুড়ি লক্ষ্মীদেবাম্মা তাদের বিবাহিত জীবনে হস্তক্ষেপ করছেন এবং তার স্ত্রীকে দেহ ব্যবসায় উৎসাহিত করছেন। এই সন্দেহের বশবর্তী হয়ে তিনি সতীশ ও কিরণকে মোটা অঙ্কের টাকার লোভ দেখিয়ে খুন করার ছক কষেন। ৩ই আগস্ট, লক্ষ্মীদেবাম্মাকে গাড়িতে তুলে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। এরপর পরের দিন সতীশের জমিতে নিয়ে গিয়ে অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে দেহটিকে ১৯টি টুকরোয় কেটে ১৯টি ভিন্ন স্থানে ফেলে দেওয়া হয়।

এই ভয়াবহ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কর্ণাটকে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। পুলিশ তিন অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করেছে।