LOC-তে বিরাট রেল প্রকল্প বানাচ্ছে চিন, ভারতের জন্য তবে কি অশনির সংকেত?

ভারত-চিন সীমান্তে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে চিন তিব্বত ও জিনজিয়াংকে সংযুক্ত করে প্রায় ২,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি নতুন রেল প্রকল্প শুরু করেছে। এই রেলপথটি ভারতের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি)-র অত্যন্ত কাছে এবং বিতর্কিত আকসাই চিন অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যাবে। এই কৌশলগত পদক্ষেপ ভারতের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রকল্পের বিস্তার ও ইতিহাস:

চিনের এই নতুন রেললাইনটি তিব্বতের শিগাতসে শহর থেকে শুরু হয়ে নেপালের সীমান্ত বরাবর অগ্রসর হবে। এরপর এটি আকসাই চিন অঞ্চলের মধ্য দিয়ে জিনজিয়াং প্রদেশের হোতানে পৌঁছাবে। এই রেললাইনটি এমন এক সময়ে তৈরি করা হচ্ছে যখন লাসাকে কেন্দ্র করে ২০৩৫ সালের মধ্যে ৫,০০০ কিলোমিটার রেল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে চিন। এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজ কঠিন ভূখণ্ডে সম্পন্ন হবে, যেখানে গড় উচ্চতা ৪,৫০০ মিটারেরও বেশি এবং পার্মাফ্রস্ট, হিমবাহ ও হিমায়িত নদীর মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

চিন ২০০৬ সালে তিব্বতকে তার রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে প্রথম যুক্ত করে। এরপর ২০১৪ সালে লাসা-শিগাতসে এবং ২০২১ সালে লাসা-নিংচি রেললাইন চালু করে, যা অরুণাচল সীমান্তের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কেন্দ্র। নতুন এই রেলপথটি সেই পরিকল্পনারই একটি অংশ।

ভারতের জন্য কৌশলগত উদ্বেগ:

১. আকসাই চিন বিরোধ: আকসাই চিন অঞ্চলটি ভারতের অংশ হলেও ১৯৫০-এর দশক থেকে চিনের দখলে রয়েছে। ১৯৬২ সালের ভারত-চিন যুদ্ধের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল এই অঞ্চলের জিনজিয়াং-তিব্বত হাইওয়ে নির্মাণ। নতুন এই রেলপথটিও ওই বিতর্কিত অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা ভারতের জন্য এক বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ।

২. সীমান্ত নিরাপত্তা: এই রেললাইন চালু হলে চিন খুব কম সময়ে সীমান্তে বিপুল সংখ্যক সৈন্য ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠাতে পারবে। এর ফলে অরুণাচল প্রদেশ এবং সিকিমের মতো সংবেদনশীল এলাকায় উত্তেজনা বাড়তে পারে। এছাড়াও, এই রেলপথটি ২০১৭ সালের ডোকলাম সংঘাতের কেন্দ্রস্থল সংবেদনশীল চাম্বি উপত্যকা এবং নেপালের সীমান্তেও পৌঁছাবে।

ভারতের প্রতিক্রিয়া ও প্রস্তুতি:

যদিও ভারত এই বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে সীমান্ত অবকাঠামো উন্নয়নে মনোযোগ বাড়িয়েছে। সীমান্ত এলাকায় সড়ক, সেতু এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চিনের এই রেল প্রকল্প শুধু একটি অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, বরং এটি ভারতের ওপর সামরিক ও কৌশলগত চাপ বাড়ানোর একটি পরিষ্কার ইঙ্গিত। এই প্রকল্পের ফলে ভারত-চিন সীমান্তের পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।