দিল্লির রাজপথ সারমেয়শূন্য করার নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের, মানবাধিকার বনাম পশুপ্রেমের সংঘাত

দেশের রাজধানী দিল্লিকে পথকুকুরশূন্য করার এক নজিরবিহীন নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত মামলায় জানিয়েছে, দিল্লি ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিওন (এনসিআর)-এ কোনো পথকুকুর থাকতে পারবে না। তাদের ধরে শহরের বাইরের শেল্টারে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য দিল্লি নগর নিগম এবং এনসিআর কর্তৃপক্ষকে আট সপ্তাহের সময় দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশের ফলে মানবাধিকার ও পশুপ্রেমের মধ্যে নতুন করে সংঘাতের সৃষ্টি হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট তার নির্দেশে বলেছে, নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং কুকুরের কামড়ের ভয় দূর করতে এই পদক্ষেপ জরুরি। যদি কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন এই নির্দেশ কার্যকরে বাধা দেয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

এই কঠোর নির্দেশের সময় কয়েকজন আইনজীবী আপত্তি জানালেও আদালত তা গ্রাহ্য করেনি। বিচারপতি পারদিওয়ালা বলেন, “তথাকথিত পশুপ্রেমীরা কি কুকুরের কামড়ে মৃত শিশুদের ফিরিয়ে দিতে পারবেন? বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করেই পদক্ষেপ করতে হবে।” আদালত আরও প্রশ্ন তোলে, নির্বীজকরণের পর কেন কুকুরদের আবার সেই একই এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়। আদালতের মূল লক্ষ্য হলো শিশুদের রাস্তায় নির্ভয়ে বেরোনো নিশ্চিত করা এবং এই ক্ষেত্রে কোনো আবেগকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।

আদালত প্রশাসনকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, কোনোভাবেই পথকুকুরদের শেল্টার থেকে আবার রাস্তায় ছাড়া যাবে না। যদি এর অন্যথা হয়, তবে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য দিল্লি সরকার, নগর নিগম এবং গুরুগ্রাম ও নয়ডা কর্তৃপক্ষকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। একই ধরনের নির্দেশ এদিন রাজস্থান হাইকোর্টও দিয়েছে, যা জয়পুর, যোধপুর এবং উদয়পুর পুরসভাকে পথকুকুর সরাতে স্পেশাল ড্রাইভ চালানোর কথা বলেছে।

তবে সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের বিরোধিতা করছে বিভিন্ন পশুপ্রেমী সংগঠন। তাদের মতে, এই নির্দেশ অমানবিক এবং বাস্তবসম্মত নয়। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পরিচালিত সোনারপুরের একটি পশু হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত সম্রাট মুখোপাধ্যায় বলেন, “আদালতকে সম্মান জানিয়েও বলছি, এই নির্দেশ অমানবিক। অবলা জীবদের নগরছাড়া করার নিদান দিয়ে কি আদৌ সমস্যার সমাধান হবে?” তারা এই নির্দেশ পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

কলকাতার এক পুর আধিকারিক বলেন, এই নির্দেশ কার্যকর করার মতো পরিকাঠামো বা লোকবল কোনো রাজ্যেরই নেই। পশুপ্রেমী এবং পশু চিকিৎসকদের মতে, পথকুকুরদের হিংস্র হয়ে ওঠার পেছনে দীর্ঘ সময় ধরে তাদের ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত থাকা একটি বড় কারণ। আধুনিক নগরজীবনে খাবারের দোকানের সংখ্যা কমে যাওয়া, হাইরাইজে বন্দি জীবন এবং গাড়ির সংখ্যাবৃদ্ধির ফলে শাবক ও সঙ্গীদের মৃত্যুও তাদের আগ্রাসী করে তোলে। এই বৃহত্তর পরিসরে সমাধান না খুঁজে সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশে আদৌ কোনো সুরাহা হবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকে।

কেন্দ্রীয় প্রাণী সম্পদ মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর গোটা দেশে ৩৭ লক্ষেরও বেশি মানুষকে কুকুরে কামড়েছিল এবং ৫৪ জনের মৃত্যুও নথিভুক্ত হয়েছে। যদিও দেশের সামগ্রিক পথকুকুরের সংখ্যা কমেছে, কিছু রাজ্যে এর সংখ্যা বেড়েছে।