ট্রাম্পের শুল্ক-ফাঁস কেটে বেরোনোর উপায় কী? নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ কি দিলেন পরামর্শ?

রাশিয়া থেকে সস্তায় অপরিশোধিত তেল আমদানির জেরে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক ২৫ শতাংশ বাড়ানোর পর এবার এই কৌশল নিয়ে ভারতকে সতর্ক করলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ভারতের উচিত রাশিয়ান তেল আমদানি চালিয়ে যাওয়া এবং মার্কিন বাজারে উচ্চ শুল্কের কারণে বাজার হারানো— এই দুইয়ের মধ্যে কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তা খতিয়ে দেখা।
সোমবার হরিয়ানার গুরুগ্রামে বিএমএল মুঞ্জাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় মোট আমদানি শুল্কের পরিমাণ ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ব্রাজিল ছাড়া আর কোনো দেশের ক্ষেত্রে এত বেশি নয়। এর ফলে বেশ কিছু ভারতীয় পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার বাইরে চলে গেছে।
অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রাশিয়ান তেল আমদানি করাটা আমাদের কাছে কতটা মূল্যবান, সেই বিষয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন। এরপরে আমেরিকাকে প্রশ্ন করা উচিত, যদি আমরা রুশ তেল আমদানি বন্ধ করি, তবে কি তারা শুল্ক প্রত্যাহার করবে?”
তিনি আরও বলেন, ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরেই অনেক ভারতীয় পণ্য মার্কিন বাজারে তাদের প্রতিযোগিতার ক্ষমতা হারিয়েছে। তাই এই পণ্যগুলির ওপর শুল্ক ৫০ শতাংশে বাড়লেও নতুন করে কোনো ক্ষতি হবে না।
মার্কিন-ভারত বাণিজ্য চুক্তির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওয়াশিংটন ভারতীয় কৃষি ও দুগ্ধজাত পণ্যের বাজারে আরও বেশি প্রবেশাধিকার চায়, যা নয়াদিল্লি মানতে রাজি নয়। এই পরিস্থিতিতে তিনি ভারতকে চীনকে এই আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করে একটি বৃহত্তর বাণিজ্যিক চুক্তির কথা ভাবার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “হয়তো আমাদের এটি (ভারত-মার্কিন বাণিজ্য আলোচনা) ভারত-চীন বাণিজ্য আলোচনার সঙ্গে একত্রিত করা উচিত। আমি মনে করি এখন এই পদক্ষেপের জন্য খুব ভালো সময়।”
প্রয়োজনে আসিয়ান বাণিজ্য ব্লকেও ভারতের যোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন অভিজিৎ। তবে তিনি মনে করেন, আসিয়ান ব্লকের চেয়ে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় অর্থনীতিকে ‘ডেড ইকনমি’ বললেও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক হওয়া জরুরি। তার মতে, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বাণিজ্যিক অনিশ্চয়তার কারণে এই বছর ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়ে কম হতে পারে। তিনি বেসরকারি বিনিয়োগে ভাটা এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির ওপর বাড়তে থাকা আর্থিক চাপের কথাও উল্লেখ করেন।
অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “টিসিএস-এর মতো সংস্থাগুলি নতুন নিয়োগ করছে না। আইটি কর্মীদের বেতন বাড়ছে না। এই সব সমস্যাগুলির মোকাবিলা করিনি আমরা, বসে থেকেছি।” তিনি সরকারকে এই অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় আরও সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দেন।