শ্রাবণের শেষ সোমবারে ভক্তদের ঢল, পঞ্চমুখী শিব মন্দিরে উপচে পড়া ভিড়, কোথায় আছে এই মন্দির জানেন?

শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবার, মহাদেবের আরাধনার এই বিশেষ দিনে মুর্শিদাবাদের বাঘডাঙ্গার পঞ্চমুখী শিব মন্দিরে ভক্তদের ঢল নেমেছে। এই মন্দিরটি ভারতবর্ষের একমাত্র পঞ্চমুখী শিব মন্দির হিসেবে পরিচিত, তাই দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এখানে আসেন মনস্কামনা পূরণের আশায়। এদিন সকাল থেকেই মন্দিরের পথে ছিল ভক্তদের দীর্ঘ লাইন, যাদের অনেকেই পায়ে হেঁটে এসে শিবের মাথায় জল ঢালছেন।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: আঠারো শতকের প্রাচীন মন্দির
মুর্শিদাবাদ জেলার ইতিহাসে বাঘডাঙ্গা একটি অত্যন্ত প্রাচীন ও পরিচিত স্থান। এই এলাকার পঞ্চমুখী শিবমন্দির প্রাঙ্গণটি অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে রাজা কালীশঙ্কর রায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মন্দির প্রাঙ্গণের প্রধান মন্দিরটি হল কালীশ্বর শিব মন্দির, যার দৈর্ঘ্য-প্রস্থ প্রায় ১৮ ফুট এবং উচ্চতা ৪০ ফুট। নয়টি চূড়াবিশিষ্ট এই মন্দিরের দেওয়ালে দেবদেবীর মূর্তি ও ফুলকারি নকশা আঁকা। মন্দিরের মূল আকর্ষণ হল প্রায় চার ফুট উঁচু পঞ্চমুখী শিবলিঙ্গ। এই প্রাঙ্গণে কালীশ্বর শিব মন্দির ছাড়াও আরও ১৩টি শিব মন্দির রয়েছে।

অন্যান্য মন্দির এবং রাজবাড়ির করুণ দশা
মন্দির প্রাঙ্গণের উত্তরে পাঁচটি এবং দক্ষিণে আটটি শিব মন্দির রয়েছে, যেগুলি বিভিন্ন স্থাপত্য শৈলীতে (আটচালা ও চারচালা) নির্মিত। এই মন্দিরগুলোর পাশেই ছিল বাঘডাঙ্গা রাজার বিশাল ঠাকুরবাড়ি, যেখানে একসময় অসংখ্য মন্দির ছিল এবং নিয়মিত পূজাপাঠ ও কাঁসর-ঘণ্টার শব্দ শোনা যেত। কিন্তু কালের বিবর্তনে আজ সেসব মন্দিরের অধিকাংশই ধ্বংসপ্রাপ্ত এবং জঙ্গলে ভরে গিয়েছে।

রাজবাড়ির ধ্বংসপ্রাপ্ত রাধাকৃষ্ণ ও সূর্যেশ্বর মন্দিরের পাশে বর্তমানে একটি দালান মন্দিরে প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো কষ্টিপাথরের কালীমূর্তি পূজিত হচ্ছে। এছাড়াও, সদর পুকুর নামের এক বিশাল দিঘির সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে এর ঘাট বাঁধানো হয়েছে এবং বসার জায়গা তৈরি করা হয়েছে।

শ্রাবণের এই পবিত্র দিনে হাজারো ভক্তের উপস্থিতিতে প্রাচীন এই মন্দির যেন আবারও প্রাণ ফিরে পেয়েছে। একদিকে যেমন প্রাচীন স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষ ইতিহাসকে মনে করিয়ে দিচ্ছে, তেমনই অন্যদিকে ভক্তদের নিষ্ঠা ও বিশ্বাস প্রমাণ করছে যে এই মন্দিরের ঐতিহ্য আজও অক্ষুণ্ণ রয়েছে।