আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে সিপিআইএমের উত্থান, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের প্রতিবাদে লাল ঝড়ের পূর্বাভাস

একসময় যেখানে আরএসএস-এর সাংগঠনিক তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো, সেই আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে এখন লাল ঝাণ্ডার ঝড়। বঙ্গোপসাগরের এই দ্বীপপুঞ্জে দীর্ঘ বাম শাসনেও যে সিপিআইএম তেমন জাঁকিয়ে বসতে পারেনি, সেখানেই বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মতো একটি ইস্যুকে সামনে রেখে বিশাল জনবিক্ষোভ সংগঠিত করে চমকে দিয়েছে তারা। রবিবার পোর্ট ব্লেয়ারে আয়োজিত এই প্রতিবাদ সমাবেশ সংঘ পরিবারের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
কারণ: ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট
মূলত পোর্ট ব্লেয়ার এবং দক্ষিণ আন্দামানের গ্রামীণ অঞ্চলে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের প্রতিবাদে এই বিক্ষোভের ডাক দেয় সিপিআইএম আন্দামান-নিকোবর স্টেট কমিটি। ফিনিক্স বে-তে বিদ্যুৎ বিভাগের কার্যালয়ের সামনে হাজার হাজার মানুষ লাল পতাকা হাতে নিয়ে জড়ো হন।
সিপিআইএমের অভিযোগ
সিপিআইএমের আন্দামান ও নিকোবর সম্পাদক ডি. আইয়্যাপন এই বিক্ষোভ সমাবেশের উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের “অবৈজ্ঞানিক ও ভুল নীতি”র ফলেই এই বিদ্যুৎ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তার মতে, গত ১১ বছরে মোদী সরকারের আমলে এই দ্বীপপুঞ্জের বিদ্যুৎ পরিষেবা কার্যত ভেঙে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, এই সংকটের শিকার সবচেয়ে বেশি সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে ছাত্রছাত্রী, নারী ও বৃদ্ধরা।
সাংসদ ও বিজেপির ব্যর্থতার অভিযোগ
বিক্ষোভ সভায় আন্দামান ও নিকোবরের সাংসদের বিরুদ্ধে জনগণের সমস্যা সমাধানে ব্যর্থতার অভিযোগ আনা হয়। সিপিআইএম আন্দামান-নিকোবর সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ডি. লক্ষ্মণ রাও বলেন, কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এই প্রতিবাদ সমাবেশ। পোর্ট ব্লেয়ার সিটি আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক পি. সত্যপাল গত নির্বাচনে বিজেপির দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি বলেও অভিযোগ করেন।
কেন্দ্রেও বামেদের চাপ
আন্দামানের বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে সম্প্রতি সিপিআইএম-এর তামিলনাড়ুর সাংসদ আর. সচিথানান্থম কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। তিনি দ্বীপে আরও ডিজেল জেনারেটর পাঠানোর অনুরোধ জানালেও উচ্চ উৎপাদন খরচের কারণে তা খারিজ হয়ে যায়। উল্লেখ্য, এই দ্বীপপুঞ্জে তামিলভাষীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য, এবং তামিলনাড়ু সরকারের শরিক সিপিআইএম তাই এখানে সংগঠন বিস্তারে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।
একদিকে আরএসএস-এর ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি, অন্যদিকে বাঙালি এবং তামিলভাষীদের মিশ্র জনবসতি – এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ সংকটের মতো একটি জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে কেন্দ্র করে সিপিআইএমের এই শক্তিশালী উত্থান দ্বীপপুঞ্জের রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।