‘পাণ্ডবদের তৈরি’-প্রাচীন মন্দিরকে গ্রাস করে নিল উত্তরকাশীর হড়পা বান, হতাশ পূর্ণ্যাথীরা

উত্তরাখণ্ডে প্রকৃতির রুদ্র রূপে ধরালী গ্রামের এক প্রাচীন ঐতিহ্য চিরতরে ধ্বংস হয়ে গেল। ক্ষীরগঙ্গা নদীতে হড়পা বানের ফলে ভেসে গেছে গ্রামের একাংশ, আর তার সঙ্গেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে ঐতিহাসিক কল্প কেদার মন্দির। স্থানীয় লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, মহাভারতের নির্বাসনকালে পাণ্ডবরা এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন।
মঙ্গলবার আচমকা আসা এই ভয়াবহ বন্যায় ধরালী গ্রামের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যার তীব্র স্রোতে বহু ঘরবাড়ি, যানবাহন, হোটেল এবং রাস্তাঘাট ভেসে গেছে। এই ধ্বংসলীলার মধ্যে চাপা পড়ে গেছে গ্রামের সবচেয়ে প্রাচীন ও পবিত্র কল্প কেদার মন্দিরটিও।
স্থানীয়দের মতে, এই মন্দিরটি ছিল পাণ্ডবদের তৈরি। মন্দিরের গর্ভগৃহে থাকা শিবলিঙ্গটি নন্দীর পিঠের মতো দেখতে, যার সঙ্গে কেদারনাথের শিবলিঙ্গের দারুণ সাদৃশ্য রয়েছে। স্থাপত্যশৈলীর দিক থেকেও এর সঙ্গে কেদারনাথ মন্দিরের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তাই স্থানীয়রা এই মন্দিরটিকে পঞ্চ কেদারের অংশ হিসেবে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখতেন।
এই মন্দিরটির ইতিহাস বেশ প্রাচীন। বহু বছর আগে হিমবাহের পরিবর্তনের কারণে মন্দিরটির বেশিরভাগ অংশই মাটির নিচে চাপা পড়ে গিয়েছিল। ১৯৪৫ সালে খনন কাজের মাধ্যমে এটি পুনরায় আবিষ্কৃত হয়। তারপর থেকে শুধু মন্দিরের গম্বুজটি দৃশ্যমান ছিল, যেখানে কালভৈরবের মুখ খোদাই করা ছিল। দর্শনার্থীদের মন্দিরে প্রবেশের জন্য সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে হতো, কারণ এটি ভূপৃষ্ঠের কিছুটা গভীরে অবস্থিত ছিল। কিন্তু আকস্মিক বন্যায় এটি আবার ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে গেল।
চারধাম তীর্থ মহাপঞ্চায়েতের সদস্য ব্রিজেশ সতী বলেন, “কল্প কেদার মন্দিরটি তীর্থযাত্রীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। এই মন্দিরটি আদি শঙ্করাচার্য দ্বারা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।” স্থানীয়দের কাছেও এই মন্দিরের আধ্যাত্মিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।
উল্লেখ্য, পঞ্চ কেদার বলতে ভগবান শিবের পাঁচটি রূপের মন্দিরকে বোঝানো হয়। কেদারনাথ, তুঙ্গনাথ, রুদ্রনাথ, মধ্যমহেশ্বর এবং কল্পেশ্বর – এই পাঁচটি পবিত্র স্থান হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের জন্য এক বিশেষ তীর্থযাত্রা। কিন্তু উত্তরকাশীর এই হড়পা বান সেই ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশকে চিরতরে মুছে দিয়েছে।