‘বাংলাদেশি ভাষা’ বিতর্ক: ‘জাতীয় সঙ্গীতের ভাষার অপমান…’ মমতার পাশে দাঁড়ালেন স্ট্যালিনও

বাংলা ভাষা নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। সম্প্রতি দিল্লি পুলিশের একটি চিঠিতে বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ হিসেবে উল্লেখ করা নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব। চিঠিটিকে ‘নিন্দনীয়, অপমানজনক, দেশবিরোধী এবং অসাংবিধানিক’ বলে অভিহিত করেছেন তাঁরা। শুধু তৃণমূল নয়, বামফ্রন্ট সহ অন্যান্য বিরোধী দলও এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছে। এবার এই বিতর্কে সামিল হয়েছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন, যিনি বাংলার পাশে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের মনোভাবের তীব্র সমালোচনা করেছেন।

সোমবার এক সরকারি বিবৃতিতে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন দিল্লি পুলিশের বাংলা ভাষাকে “বাংলাদেশি ভাষা” বলার কড়া নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে দিল্লি পুলিশ বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। এটি আমাদের জাতীয় সঙ্গীত যে ভাষায় লেখা হয়েছিল তারই সরাসরি অপমান।” এই বিষয়টি নিয়ে তিনি নিজের ‘এক্স’ (পূর্বের টুইটার) হ্যান্ডেলেও পোস্ট করেছেন।

স্ট্যালিন আরও বলেন, এই ধরনের মন্তব্য কোনো অনিচ্ছাকৃত ভুল নয়, বরং এটি এমন একটি শাসনব্যবস্থার অন্ধকার মানসিকতা প্রকাশ করে যা ধারাবাহিকভাবে বৈচিত্র্যকে ক্ষুণ্ন করে। এই প্রসঙ্গে তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করে লিখেছেন, “হিন্দি ব্যতীত অন্যান্য ভাষাগুলির উপর এই আক্রমণের মুখে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের ভাষা এবং জনগণের জন্য ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়ে আছেন। উপযুক্ত জবাব না দিয়ে তিনি এই আক্রমণকে এড়িয়ে যাবেন না।”

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি নয়াদিল্লির লোদী কলোনি থানার পুলিশ অফিসার অমিত দত্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বঙ্গভবনের অফিসার-ইন-চার্জকে একটি চিঠি পাঠান। তৃণমূলের অভিযোগ, ওই চিঠিতে বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশিদের ভাষা’ বলে অভিহিত করেছে দিল্লি পুলিশ। এমন চিঠি হাতে পাওয়ার পরেই তৃণমূল শিবির ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে। রবিবার এক টুইটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, “দেখুন কীভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সরাসরি নিয়ন্ত্রণাধীন দিল্লি পুলিশ বাংলাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলে অভিহিত করেছে! বাংলা তো আমাদের মাতৃভাষা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও স্বামী বিবেকানন্দের ভাষা, জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় গানের ভাষা। এই ভাষা আমাদের সংবিধানে স্বীকৃত, কোটিকোটি ভারতবাসীর ভাষা। সেটাই এখন ‘বাংলাদেশি ভাষা’!”

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনাকে ‘বাঙালিদের অব্যাহত টার্গেটিং’ বলে উল্লেখ করে বলেন, “মাসের পর মাস ধরে বাংলাভাষীদের হেনস্থা করা হচ্ছে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে। এবার কেন্দ্রীয় পুলিশের চিঠিতে বাংলাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপমান।”

অন্যদিকে, এই পুরো বিষয়টি নিয়ে বিজেপি শিবিরের বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘নাটক’ করছেন। বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার বলেন, “তিনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) বাংলাদেশীদের রক্ষা করছেন। বাংলায় ১.৫ কোটিরও বেশি অবৈধ ভোটার আছে। এখন বাংলায় এসআইআর-এর মাধ্যমে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হবে। এর ফলে নির্বাচনে মমতার জয় অসম্ভব হয়ে পড়বে।” এই ঘটনায় বাংলা ভাষার প্রতি অবমাননা এবং এর রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে দেশের রাজনীতিতে।